এখলাছ খুনের দুই কারণ, জমি ও নারী: ডিবি
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের ভূমি ব্যবসায়ী মো. এখলাছ খুনের অভিযোগে মনির হোসেন ওরফে লেদার মনির নামের এক ব্যবসায়ীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সম্প্রতি তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কামরাঙ্গীরচরের ভূমি ব্যবসায়ী এখলাছ গত ২৮ জুন রাত ১০টার সময় বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরে কামরাঙ্গীরচর থানায় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। পরদিন সকালে হাজারীবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পশ্চিম পাশে বস্তাবন্দী একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বজনেরা সেটি এখলাছের মরদেহ হিসেবে শনাক্ত করেন। বিষয়টি নিয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে লালবাগ বিভাগ।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ব্যবসায়ী এখলাছ খুনে প্রথমে গ্রেপ্তার হন মরদেহ গুমে জড়িত একজন ভ্যানচালক ও স্থানীয় একটি টেইলার্সের একজন মালিক। পরে দুজন ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে এখলাছ খুনের পরিকল্পনাকারী ব্যবসায়ী লেদার মনিরকে যশোর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি খুনে জড়িত ঝন্টু মোল্লা, খুনের সমন্বয়কারী এসহাক, খুনে জড়িত ‘কিলার’ আবদুর রহমান ও ফয়সালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
খুনের দুই কারণ
ব্যবসায়ী এখলাছ খুনের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কামরাঙ্গীরচরে একটি জমি আছে। এটার মালিকানা রয়েছে মনিরের। কিছু মালিকানা রয়েছে আবার ভুক্তভোগী এখলাছের। এই জমির জন্য জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ বাবদ যে টাকাটা (৯০ কোটি) পাবেন, এর মধ্যে ৩৫ কোটি টাকা পাবেন মনির। মনির চেয়েছিলেন, পুরো জমির টাকা নিজে নিতে। এখলাছ তাতে বাধা দেন। তখন জেলা প্রশাসন টাকা দেওয়া বন্ধ করে। ৯০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা তো দূর, তাঁর ভাগের যে ৩৫ কোটি, সেই টাকাও পাচ্ছিলেন না। এ নিয়ের তাঁর মধ্যে ক্ষোভ কাজ করেছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এখলাছ এক নারীকে বিয়ে করেন। পরে জানতে পারেন, ওই নারীর সঙ্গে মনিরের সম্পর্ক রয়েছে। এ ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। টাকা ও এই নারীর বিষয়টির জের ধরে মনির ঝন্টু মোল্লাকে দিয়ে এখলাছকে খুন করান। এখলাছকে খুন করার জন্য ২০ লাখ টাকায় চুক্তি ছিল মনির ও ঝন্টু মোল্লার মধ্যে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মনিরের ব্যক্তিগত সহকারী ঝন্টু মোল্লা এখলাছকে খুন করার জন্য আবদুর রহমানকে ভাড়াটে খুনি হিসেবে ঠিক করেন। পরে রহমান ও ফয়সাল কৌশলে এখলাছকে কামরাঙ্গীরচরের স্থানীয় একটি টেইলার্সে ডেকে নেন। পরে টেইলার্সে শ্বাসরোধে এখলাছকে খুন করে মরদেহ বস্তায় ভরে ফেলে দেন খুনিরা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, এখলাছ খুনের প্রধান আসামি মনির নোয়াখালীর এক দিনমজুর আবদুর রহিমের ছেলে। তাঁর বাবা আবদুর রহিম হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানায় একসময় কাজ করতেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সালে হাজারীবাগে বাবার সঙ্গে ট্যানারি কারখানায় অবস্থান করতেন। তখন চামড়ার গায়ের ময়লা পরিষ্কারের কাজ নেন। পরে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজে চামড়ার কেনাবেচা শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি ভূমিও দখল করেন। এভাবে শূন্য থেকে চার থেকে পাঁচটি ট্যানারির মালিক ও শত শত কোটি টাকার মালিক হন তিনি।
দক্ষিণাঞ্চল অনলাইন ডেস্ক