এখনই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসতে চান না জয় : ওবায়দুল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এখনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ‘আসতে চান না’ বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, এখানে জয়ের ইচ্ছার ব্যাপারও আছে। নেত্রীকে এ নিয়ে কোনো কিছু বললে তিনি বলেন, জয় তো আসতে চায় না। এখনও তার আসার আগ্রহ নেই।
গতকাল শুক্রবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কাদেরের এমন উত্তর আসে।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় ২০১৫ সালে তার পৈত্রিক এলাকা রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি আসেন। পরের বছর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে রংপুর থেকে কাউন্সিলর হয়েছিলেন তিনি। এবারও তাকে প্রথম নির্বাহী সদস্য করে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের আসন্ন ২১তম জাতীয় সম্মেলনে তাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দেখা যাবে কি না- সেই প্রশ্ন সাংবাদিকরা রেখেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে।
উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেটা আমাদের পার্টির সভাপতি, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিষয়। জয় তো আছেনই। আমি বারবারই নেত্রীকে বলে আসছি, যে জয়কে আপনি পরবর্তীকালের জন্য গ্র“মিং করার বিষয়টা এটা নেত্রীর সিদ্ধান্তের ব্যাপার। জয়ের নিজেরও ইচ্ছার ব্যাপার। এর আগে জয় নিজেই কোন পদ যেভাবে আছেন, সেভাবেই তিনি আপাতত থাকতে চান।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পীরগঞ্জ আসন থেকে জয়কে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু জয় তাতে রাজি হননি বলে জানান কাদের। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয় ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। সেই হিসাবে গত অক্টোবরেই শেষ হয়েছে বর্তমান কমিটির মেয়াদ। ইতোমধ্যে পরবর্তী সম্মেলনের জন্য ২০ ও ২১ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী এ দলটি।
আগামী সম্মেলনে দলের সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন কাদের দেখা যেতে পারে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, পুরনো মুখ, নতুন এটা ডিসাইড করার মালিক আমাদের সভাপতি, আমাদের গঠনতন্ত্রে তাকে এই ক্ষমতা দেওয়া আছে। আমাদের নেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, তিনি নির্ধারণ করবেন, কে আসবে দলে। আমাদের দলে শেখ হাসিনা ছাড়া আরও কেউ অপরিহার্য ব্যক্তি নয়।
আর নিজের পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নেত্রী যা ইচ্ছা করবেন সেটাই হবে। তিনি পরিবর্তন চাইলে পরিবর্তন হবে। আমাদের এখানে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। হয়ত কারও কারও ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। সাধারণ সম্পাদক পদেও প্রার্থী থাকতে পারে। সেখানে কোনো অসুবিধা নেই। আমি যদি মনে করি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ হতে পারবে না, এটা তো ঠিক হবে না।
আওয়ামী লীগের কমিটির পরিধি বাড়তে পারে কিনা- এ প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের কমিটির কলেবর এখন পর্য়ন্ত বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা নেই। কমিটি ৮১ জনেরই থাকবে। আমাদের নেত্রী যেটা মনে করছেন, আপাতত কমিটিতে সংখ্যা বাড়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই।
বর্তমান কমিটিতে সদস্যের একটি এবং সভাপতিমণ্ডলীর যে দুটি পদ খালি আছে, সেগুলো সম্মেলনের মধ্য দিয়েই পূরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
বিএনপিও আমন্ত্রণ পাবে : আওয়ামী রীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে বিএনপিসহ সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, প্রতিবার যাদের আমন্ত্রণ করি, এবারও তাদের করব। যারা জোটের অংশ, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমরা বিএনপিকেও দাওয়াত দেব। বিদেশ থেকে প্রতিনিধি যেহেতু মুজিব বর্ষে আসবে, সে জন্য জাতীয় সম্মেলনে আমরা তাদের দাওয়াত দিচ্ছি না। তবে আমরা এখানে কূটনৈতিকদের দাওয়াত দেব।
উপজেলায় দলের নেতৃত্বে এমপিরা নয় : আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের কমিটির নেতৃত্বে দলীয় সংসদ সদস্যদের না রাখতে দলীয় সভাপতির নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্যরা সভাপতি পদপ্রার্থী হন, এটা নিরুৎসাহিত আমরা করছি। উপজেলা পর্যায়ে সংসদ সদস্যদের আমরা অনুরোধ করছি, তারা যেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে না এসে, ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতা-কর্মীদের একটা সুযোগ করে দেন। কারণ তাদেরও অধিকার আছে। তারা এমপিও হতে পারেনি, দলেও নেতৃত্ব পাবে না- এটা তো হয় না।
জাতীয় সম্মেলনের পরিকল্পনা জানিয়ে কাদের বলেন, সম্মেলনের প্রথম দিন সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনটি আকারে কিছুটা বড় হলেও তিনি সংক্ষিপ্ত আকারে পড়বেন। এছাড়া থাকবে শোক প্রস্তাব।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কাউন্সিল অধিবেশন হবে। যদি আমাদের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রে কোনো সংশোধনী থাকে, সেটার অনুমোদন নেওয়া হবে। সংশোধনীর ব্যাপারে ইতোমধ্যেই আমরা জেলা শাখাগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছি, তাদের কোনো প্রস্তাব আছে কিনা, সংযোজন, সংশোধন অথবা পরিমার্জন পরিবর্ধনে জেলা শাখার কোনো প্রস্তাব আছে কিনা, সে ব্যাপারে চিঠি পাঠাতে বলেছি।
সহযোগী সংগঠনগুলার সম্মেলনে বিশৃঙ্খলা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ‘চোখে পড়ার মত’ সংঘাত আওয়ামী লীগে হয়নি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের উত্তরের সম্মেলনে বসা নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে একটু চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছে, এটা সত্য। যারা যারা করেছে, তাদের ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এটা সিরিয়াসলি বলা হয়েছে। চট্টগ্রামে তো সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কোথাও কোনো ঘটনা ঘটেনি।
কাদের বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন এক সঙ্গেই হবে। কীভাবে সম্মেলন পরিচালিত হবে তা মহানগর নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনারা দেখেছেন এই সম্মেলনে একই মঞ্চেই আমরা সবগুলো সম্মেলন করব। দলের জাতীয় সম্মেলনও এ মঞ্চেই হবে। মঞ্চটা আমরা আকৃতি, আকার পরিবর্তন করেছি, এখন নৌকারে আদলে মঞ্চটা তৈরি হয়েছে। আগামীকাল স্বেচ্ছাসেবকলীগের জাতীয় সম্মেলন থেকে এই মঞ্চেই আমাদের সবগুলো সম্মেলন হবে। সে ব্যাপারে সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।