একের পর এক ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসছে মিয়ানমার
একের পর এক ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসছে মিয়ানমার। মর্টার শেল নিক্ষেপের এক সপ্তাহ না পেরোতেই এবার মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গোলা বান্দরবানে বাংলাদেশের সীমানায় পড়েছে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতে অমিমাংসিত বিষয়টি তো আছেই। এসব ঘটনায় মিয়ানমারের ধৃষ্টতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেরই প্রশ্ন বাংলাদেশকে কী বার্তা দিতে চায় প্রতিবেশী দেশটি। যদিও মিয়ানমারের এই ধরনের ধৃষ্টতায় ক্ষুব্ধ ঢাকা। ইতিমধ্যে একটি ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
মিয়ানমার এসব ঘটনার মাধ্যমে গায়ে পড়ে বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে বলেন মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসাইন। এজন্য মিয়ানমারের ফাঁদে পা না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মিয়ানমার যখনই বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, তখনই প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা মেইলকে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘মিয়ানমার যেহেতু সারা বিশ্বে একটি বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র, সামরিক জান্তারা শাসন করছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি বিরোধ আছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে একটি সংঘাতে লিপ্ত। সীমান্তবর্তী অংশ হওয়ার কারণে এই ঘটনাগুলো ঘটছে। তবে এটা সত্য যে অতীতে থাইল্যান্ড চীনে এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছে তবে পরে সেখানে যেভাবে সংযম প্রদর্শন করেছে, আমাদের ক্ষেত্রে সেটি করছে না বরং উস্কানিমূলক আচরণ করছে। এক ধরনের গায়ে পড়ে বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ সেই ফাঁদে পা দেবে না।’
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছিল লাখ লাখ রোহিঙ্গা। মানবিক কারণে সরকার এই জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিলেও এখন তারা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরাতে সরকার নানা তৎপরতা চালালেও পাঁচ বছরেও তাদের নিজভূমে পাঠানো সম্ভব হয়নি। শুরুর দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কিছুটা আলাপ-আলোচনা হলেও মিয়ানমার সরকারের কারণে সেই প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আলোর মুখ দেখছে না।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে এমন সংকটের মধ্যেই নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মিয়ানমারের গোলাবর্ষণের ঘটনা। যার শুরু গত ২৮ আগস্ট। সেদিন দুপুরের পর বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টার শেল পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে এতে হতাহতের ঘটনা না হলেও ওই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
ঘটনার পর কড়া জবাব দেয় ঢাকা। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ২৯ আগস্ট বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে নোট ভারবালের মাধ্যমে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে তাকে সতর্ক করা হয়।
ওই ঘটনার এক সপ্তাহ না পেরোতেই শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গোলা বান্দরবান সীমান্তবর্তী এলাকায় পড়ার খবর পাওয়া যায়। তবে গোলা দুটি অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মর্টার শেলের পর মিয়ানমারের গোলাবর্ষণের ঘটনায় আবারও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এ ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ফের তলব করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা বিষয়টি জেনেছি। এক সপ্তাহ হয়নি। এরই মধ্যে আরেকটি ঘটনা এটি দুঃখজনক। তবে আমাদের দিক থেকেও আমরা কূটনৈতিক জবাব দেব।
রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি সীমান্তে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে মিয়ানমার যে বার্তাই দিক বাংলাদেশের কূটনৈতিক সুলভ আচরণ অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসাইন।
ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি আছে সেই বিবেচনায় মিয়ানমারের মতো একটি বর্বর, রোহিঙ্গাদের প্রতি যে বর্বরতা দেখিয়েছে সেই রাষ্ট্র যারা আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন তাদের অধিকাংশ সামরিক নেতা বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার কবলে আছে। ফলে তাদের বিষয়কে কূটনৈতিক উপায়ে দেখতে হবে। যা আমাদের সরকার করছে।’
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মিয়ানমার যখনই বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, তখনই প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি মিয়ারমারের উচ্চ মহলেও বার্তা দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, ‘মিয়ানমারের সরকারের কাছে বার্তা দিতে হবে। এ ধরণের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় সেটি বলতে হবে। আলাপ আলোচনার মাধ্যেমে ঠিক করতে হবে। এ ধরনের ধৃষ্টতা যেন বার বার না দেখায় সেজন্য রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানাতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারের উচ্চমহলে বার্তা দিতে হবে।’