একুশ আমার অহংকার
দ: প্রতিবেদক
আজ ৪ঠা ফেব্র“য়ারি। মহান ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্র“য়ারির চতুর্থ দিন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি থাকলেও এর অনেক আগে থেকেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ এবং শুধু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন সৃষ্টির জন্য তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে প্রথম ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের প্রস্তাব অগ্রাহ্য হওয়ায় ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি ঢাকা তীব্র বিক্ষোভ দেখা দেয়। রাজধানীতে ধর্মঘট ও রমনা এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন তমদ্দুন মজলিসের সম্পাদক আবুল কাশেম। সভায় দাবি করা হয় উর্দু ভাষার পাশাপাশি বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করতে হবে। ২ মার্চ ভাষা আন্দোলনকে তরান্বিত করার জন্য রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ স¤প্রসারণ ও পুনর্গঠন করা হয়। ফজলুল হক হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় সলিমুল¬াহ মুসলিম হলের তমদ্দুন মজলিসের কর্মী শামসুল আলমকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক নির্বাচিত করা হয়। এই সভা ৭ মার্চ ডাকায় ধর্মঘন ও ১১ মার্চ দেশের সর্বত্র রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ধর্মঘটকে সফল করার জন্য অফিস আদালতের সামনে পিকেটিং চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিসদের ১১ মার্চের ধর্মঘটকে সফল করার জন্য ছাত্ররা সেক্রেটারিয়েটের বাইরে সমবেত হলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে এর ফলে ৫০জন ছাত্র আহত হয়। অনেককে গ্রেফতার করা হয়। সভা, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্রদের পিকেটিং এ ঢাকা শহর বিক্ষোভ মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। বাংলার প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়। ছাত্রদের এ আন্দোলন ১১ মার্চ বন্ধ হয়ে যায়নি। পরের দিনগুলোতে এ আন্দোলন আরও জোরদার হতে থাকে এবং সাধারণ জনগণও এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে থাকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে ১৫ মার্চ আলোচনার বসতে বাধ্য হন। এই দিন পূর্ববাংলার প্রাদেশিক সরকারের সাথে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ৮ দফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে সরকার পক্ষের খাজা নাজিম উদ্দীন সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে আহŸায়ক শামসুল আলম স্বাক্ষর করেন।- (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র- ১ম খন্ড)