একুশ আমার অহংকার
দ: প্রতিবেদক
আজ ৩রা ফেব্রুয়ারি। মহান ভাষা আন্দোলনের মাসের তৃতীয় দিন। বিশ্বে বাঙালীদের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতার অব্যবসিহত পর হতে পাকিস্তানের শাসক শ্রেণি উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যদিও পাকিস্তানের ৩.২৭% জনসাধারণ উর্দু ভাষা ব্যবহার করেন তথাপি পাকিস্তানের মুদ্রা, ডাকটিকেট, মানি অর্ডার ফরম, রেলের টিকেট প্রভৃতিতে কোন ইংরেজি ও উর্দু ভাষা ব্যবহার করা হয়। পকিস্তান গণপরিষদের সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি ও উর্দুকে নির্বাচন করা হয়। ২৩ ফেব্র“য়ারি ১৯৪৮ সালে গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হলে তৎকালীন কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করে ইংরেজি উর্দুর সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের সরকারি ভাষা করার প্রস্তাব দেন। ২৫ ফেব্র“য়ারি ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের এই প্রস্তাবের উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মাতৃভাষা বাংলা। সুতরাং সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। বিতর্কের পর ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের আনীত প্রস্তাব ভোট দেয়া হলে তা অগ্রাহ্য হয়। বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি অগ্রাহ্য হওয়ায় পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অধ্যাপক আবুল কাশেম এর সভাপতিত্ব এক প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। সভার পর প্রতিবাদ মিছিল করে ছাত্ররা সেক্রেটারিয়েট যায়। সেখানে ছাত্ররা নূরুল আমিন (১৮৯৩-১৯৭৪) ও হামিদুল হক চৌধুরীর (১৯০১-১৯৯২) সঙ্গে সাক্ষাত করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানায়। নূরুল আমিন ছাত্রদের নিকট বলেন যে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে ব্যর্থ হলে তিনি আর মন্ত্রী থাকবেন না। অবশেষে মিছিলটি খাজা নাজিমুদ্দীনের বাসভবনে যায় এবং খাজা নাজিমুদ্দীনের সাথে ছাত্রদের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্ন উত্থাপন করেন। খাজা নাজিমুদ্দীন প্রতিনিধি দলকে আশ্বাস দেন যে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য তিনি দেখা করবেন।- (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র ও দৈনিক বাংলা, ১৩ ফেব্র“য়ারি ১৯৮৩ ইং)।