একুশ আমার অহংকার
দ: প্রতিবেদক
আজ ২রা ফেব্রুয়ারি। মহান ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দিন। দেশ বিভাগের পূর্বেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে এ বিষয়ে বুদ্ধিজীবী মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু করে। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করলে- ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ জ্ঞানজগৎ যুক্তি দিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। ড. মুহাম্মদ শহীদুলাহ ছাড়াও ১৯৪৭ সালের মধ্যেই বাংলা রাষ্ট্রভাষার প্রতি বহু প্রখ্যাত ও স্বল্পখ্যাত ও অখ্যাত লেখক তাদের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানিয়ে দেন। এর ফলে পূর্ববাংলার শিক্ষিত সমাজ এবং ছাত্র সমাজের মধ্যে বাংলা রাষ্ট্রভাষার স্বপক্ষে একটি প্রবল জনমত সৃষ্টি হয়। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেও বাংলাভাষার দাবিকে জোরদার করা হয়। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে নবগঠিত ২/১টি রাজনৈতিক সংগঠন ও বাংলাভাষার প্রশ্নে বক্তব্য রাখে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তমদ্দুন মজলিসের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমের উদ্যোগে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক আবুল কাশেমের আজিমপুর রোডের ১৯নং বাসভবনটি ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রথম অফিস। প্রথম হতেই তমদ্দুন মজলিসের নামে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম (১৯২৫-১৯৭৫), শামসুল আলম ও ফজলুর রহমান ভূঁইয়া। এই সংগঠনটি ছাত্র-শিক্ষক মহলে বাংলা ভাষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে অধ্যাপক ড. কাজী মোতাহার হোসেন তৎকালীন ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক আবুল মনসুর আহমদ এবং অধ্যাপক আবুল কাশেম এই তিন জনের প্রবন্ধ সন্নিবেশিত ছিল। এই গ্রন্থে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।-(তথ্যসূত্র: ড. মো: মাহবুবর রহমানের বাংলাদেশের ইতিহাস গ্রন্থ)।