একসঙ্গে শত সেতু উদ্বোধন অনন্য ঘটনা: প্রধানমন্ত্রী
সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে, এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একসঙ্গে শত সেতু উদ্বোধন দেশের জন্য অনন্য ঘটনা।’
সোমবার (৭ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নবনির্মিত সেতুগুলো উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় গণভবনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সুনামগঞ্জ, বরিশাল, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলা প্রান্ত যুক্ত ছিল।
সরকার ৮৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০০টি সেতু নির্মাণ করেছে। সেতুগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫টি, সিলেট বিভাগে ১৭টি, বরিশাল বিভাগে ১৪টি, ময়মনসিংহে ৬টি, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী ও রংপুরে ৫টি করে, ঢাকায় ২টি ও কুমিল্লায় ১টি।
১০০ সেতু উদ্বোধনকে ঐতিহাসিক ঘটনা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো—আমরা ১০০টি সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নকে দ্রুততর করতে পারব। সেতুগুলো জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো দুর্যোগে মানুষকে সাহায্য করা সহজ হবে। পণ্য পরিবহন ও বিপণন দ্রুততর ও সহজতর হবে। সেতুগুলো রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে। কারণ, এগুলো ৩৩টি রুট ফেরি পরিষেবা থেকে মুক্ত করেছে, যা সড়ক যোগাযোগকে অবাধ, দ্রুত, সহজ এবং নিরাপদ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত প্রায় ১৪ বছরে আমরা বিভিন্ন মহাসড়কে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ এবং ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেছি। তাছাড়া, বহু সড়ককে সরকার মহাসড়কে উন্নীত করেছে, যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়।’
তিনি বলেন, ‘সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মাণসহ খুলনা, পাকশী ও আশুগঞ্জে তিনটি বৃহৎ সেতু নির্মাণ করা হয়, যা মহাসড়ক নেটওয়ার্ককে নিরবচ্ছিন্ন করে তোলে। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদে ১৯ হাজার বৃহৎ, মাঝারি, ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করে।’
সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় প্রধানমন্ত্রী চলমান করোনা মহামারি থেকে উদ্ভূত বৈশ্বিক সংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দা এবং খাদ্য সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি সার্বিক উৎপাদন বাড়াতেও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের প্রত্যেকটা এলাকায় আপনারা যত পারবেন খাদ্য উৎপাদন করবেন। তরি-তরকারি যেটা পারেন উৎপাদন করবেন। হাঁস, মুরগি, ছাগল, ভেড়া—যেটা পারেন সেটা পালন করতে হবে। অর্থাৎ নিজেদের খাদ্য সংস্থান নিজেদের করার চেষ্টা করতে হবে। কেননা, বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে এর ধাক্কা যেন বাংলাদেশকে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘এই আঘাতটা আসবেই। কারণ, বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজ। কাজেই, কোনো জায়গায় একটা সমস্যা দেখা দিলে এর অভিঘাতটা বাংলাদেশেও এসে পড়ে। পাশাপাশি, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়াতে আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে খুবই সাশ্রয়ী হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের যে ধারাটা আমরা সৃষ্টি করেছি, সেটা ধরে রাখতে উৎপাদন বাড়ান। যেসব জায়গায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গেছে, সেসব এলাকায় ঘর-বাড়ি এবং চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন এবং মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে যান।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে আর কোনো অভাব হয়নি, দাবি করে তিনি বলেন, ‘শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ফলে পার্বত্য অঞ্চলেও উন্নয়ন হচ্ছে। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। সরকার এমনভাবে সেতু সড়ক ও মহাসড়কগুলো নির্মাণ করছে, যেন শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, আমরা এশিয়ান হাইওয়ে এবং এশিয়ান রেলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। কারণ, ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতে আরও এগিয়ে যেতে পারে, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি।’
বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করা হয়েছে। সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না, সেখানে সেটা করেছি। কেননা, দুর্গম এলাকাতে পর্যন্ত আমরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। এ কারণেই আজ বিভিন্ন জেলাকে যুক্ত করে একযোগে ১০০টি সেতুর উদ্বোধন করতে পারছি।’
সারা দেশে কানেকটিভি বাড়াতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশে সড়ক, নৌ এবং আকাশপথে যোগাযোগের বাড়াতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী সেতুগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। অনুষ্ঠানে সেতুর ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।