উন্নয়ন প্রকল্প এমনভাবে গ্রহণ করুন যাতে জনগণ কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় : প্রধানমন্ত্রী
(বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এমনভাবে গ্রহণ করুন, যাতে জনগণ এর কারণে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করবো কিন্তু প্রকল্প নেওয়ার সময় এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, জনগণের জন্যই তা করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে তাঁর কার্যালয়ে মহেশখালি-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) এর প্রকল্প উপস্থাপনকালে একথা বলেন।
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটানোই তাঁর সরকারের লক্ষ্য, যাতে তাঁরা সবাই একটি সুন্দর জীবন পেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘যখনই আমরা কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করবো তখন আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে দরিদ্র জনগণের জীবন এবং জীবিকা কোনভাবেই থেমে না যায়।’
প্রধানমন্ত্রী এসময় যাদের জমি-জমা নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তাদেরকে সঠিকভাবে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘এটা দেখা গেছে (বিভিন্ন সময়ই পরিলক্ষিত হয়েছে) যাদের জমি নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তারা কিছুই পাচ্ছে না। কাজেই, আমাদের বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তারা যথাযথ ক্ষতিপূরণ পেতে পারে।’
কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র তীরবর্তী এই জেলা এক সময় খুবই অবহেলিত ছিল এবং এর জনগণের জীবনযাত্রার মান ও ছিল অমানবিক।
তিনি বলেন, ‘এক সময় কক্সবাজারে কিছুই ছিল না এবং সমগ্র এলাকার জনগণ কেবল মাত্র লবণ এবং পান চাষের ওপর ওপর নির্ভরশীল ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে তাঁর সরকার কক্সবাজারকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জেলার মাতারবাড়িসহ চর এলাকাতে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লার জেটি এবং একটি এলএনজি টার্মিনাল মাতারবাড়িতে গড়ে তোলা হচ্ছে।
‘পাশাপাশি একটি বহুমুখী সমুদ্রবন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সড়ক, রেল এবং এ সংক্রান্ত আরো বিভিন্ন প্রকল্পসহ মোট ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান, চীন, ভারত এবং কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই মাতারবাড়িতে তাদের বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে তা কেবল মাতারবাড়ি অঞ্চলের উন্নয়নই নয়, সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বিরাট ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এমআইডিআই প্রকল্পের মূল নকশা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবগণ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ও দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
কক্সবাজারের ব্যাপক সম্ভাবনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখন্ড সমুদ্রতটের অবস্থান এখানেই রয়েছে। কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে এবং একইসঙ্গে এটাকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন মহাসড়কের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপনের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, যেখানে দ্রুতগতির রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার কাজও এগিয়ে চলেছে।
প্রায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য একটি বিরাট সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে স্বাধীনতা এবং স্বল্প সময়ে একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন এবং তিনি ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মানুষের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ অর্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর স্বপ্ন পূরণ হতে পারেনি কারণ, তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর অসমাপ্ত কাজকে সম্পন্ন করতেই আমরা এখন দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।
প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মিরেরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র তীরবর্তী অর্থনৈতিক করিডোর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাঁরা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পাঞ্চল (ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, সীতাকুন্ডু অর্থনৈতিক অঞ্চল), মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) প্রকল্প এবং সাবরং ইকো ট্যুরিজম পার্ক এই অর্থনৈতিক করিডোরের অন্তর্ভূক্ত।
কর্মকর্তারা বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ জ্বালানি কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ প্লান্ট, কয়লা জেটি এবং একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মিত হচ্ছে মাতারবাড়িতে।
এই প্রকল্পকে দ্রুত বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, প্রকল্পটি জাইকা’র চলমান জরিপের ওপর নির্ভর করেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলেন, নির্মানাধীন ৩৭টি প্রকল্পের মধ্যে ১৫টিই জাপান সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে জাইকা’র বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।