উত্তর কোরিয়ার রাজপথে সুইডিশ রাষ্ট্রদূতের যোগব্যায়াম
লকডাউনের মধ্যে উত্তর কোরিয়ায় রাজধানী পিয়ংইংয়ের রাস্তায় সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোয়াকিম বার্গস্ট্রমকে যোগব্যায়াম করতে দেখা গেছে।
পেটের উপর শুয়ে, মাথা সোজা রেখে পেছন দিকে ভাঁজ করা দুই পা’কে দুই হাত দিয়ে টেনে ধরে ধনুরাসন কিংবা হাত ও মাথার ওপর ভর রেখে শূন্যে দুই পা তুলে শরীর সোজা রাখার শীর্ষাসনসহ বার্গস্ট্রমের যোগব্যায়াম অনুশীলনের বেশকিছু ছবি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
খালি পা, সোনালি চুলের সুইডিশ রাষ্ট্রদূতের এসব ছবিতে উত্তর কোরিয়ার কিছু আইকনিক ভবনও দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
করোনাভাইরাসজনিত বিধিনিষেধের মধ্যেও যে অল্প কজন পশ্চিমা কূটনীতিক উত্তর কোরিয়া ছাড়েননি, বার্গস্ট্রম তাদের একজন। গভীর হতে থাকা বিচ্ছিন্নতাবোধ মোকাবেলায় যোগব্যায়ামের শরণ নেন তিনি।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে উত্তর কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন বার্গস্ট্রম। যে দেশে বিদেশি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারাবাহিকভাবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে হয় সেখানে যোগব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থ্, প্রফুল্ল থাকার প্রস্তুতি নিয়েই তিনি গিয়েছিলেন।
কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবোধ আরও গভীর হয়ে ওঠে যখন জানুয়ারিতে প্রতিবেশী চীনে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে উত্তর কোরিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, বেশিরভাগ ফ্লাইট ও ট্রেন সার্ভিস বাতিল করে এবং বিদেশি বাসিন্দাদের এক মাসেরও বেশি সময়ের জন্য কোয়ারেন্টিনে পাঠায়।
উত্তর কোরিয়া বলছে, তাদের দেশে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা শূন্য; তবে এরপরও ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশটি নানান পদক্ষেপ নিয়েছে।
জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যসহ বিদেশি কূটনীতিকদের অনেকেই সাময়িক সময়ের জন্য দেশটি ছেড়ে গেছেন; হুট করে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় কেউ কেউ আটকাও পড়েছেন।
বার্গস্ট্রম উত্তর কোরিয়ায় থেকে গেছেন এবং মাঝেমেধ্যে দেশটিতে এখনও থেকে যাওয়া কিছু কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার কর্মীদের যোগব্যায়াম শেখাচ্ছেন।
উত্তর কোরিয়ায় মার্চের শুরু থেকে বিদেশিদের তাদের অবস্থান করা কম্পাউন্ডের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হলেও তাদের চলাফেরা এবং ভ্রমণে এখনও কঠোর বিধিনিষেধ জারি রয়েছে।
বার্গস্ট্রম জানান, তিনি এখন মাঝে মাঝে সাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন পার্ক কিংবা অন্যান্য স্থানে গিয়ে যোগব্যায়াম অনুশীলন করেন।
শহরের কৌতুহলী ও বন্ধুত্বপূর্ণ বাসিন্দারা এসময় প্রায়ই তার দিকে তাকিয়ে থাকেন ও হাসেন, বলেন এ সুইডিশ রাষ্ট্রদূত।
“আমি যখন শীর্ষাসন করি তখন অনেকে অবাক হয়ে যায়। তাদের হাসি কিংবা আমার যোগ অনুশীলন নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমেও এক ধরনের যোগাযোগ তৈরি হয়। এটি খুবই চমৎকার অভিজ্ঞতা,” পিয়ংইয়ং থেকে মেসেজিং অ্যাপে রয়টার্সকে এমনটাই বলেন বার্গস্ট্রম।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিগুলোতে তাকে জুচে টাওয়ার, অসমাপ্ত রিয়ুগইয়ং হোটেল এবং আর্চ অব ট্রায়াম্পসহ পিয়ংইয়ংয়ের বেশকিছু আইকনিক ভবনের সামনে যোগব্যায়ামের বিভিন্ন আসনে দেখা গেছে।
সুইডেনের এ রাষ্ট্রদূত জানান, যোগব্যায়াম তাকে এমন একটা কিছু দিয়েছে, যার উপর নির্ভর করে তিনি বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, পানির ঘাটতি, যোগাযোগ স্বল্পতা আর এখনকার লকডাউনের মতো অনিশ্চিত সময়গুলো পার করতে পারছেন।