ঈদ পর্যন্ত সরকারকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন এফবিসিসিআই
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ৮টার পর থেকে সারাদেশে দোকান, বিপণি-বিতান, মার্কেট ও মুদি দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা আজ থেকেই কার্যকর হবে। সরকারি এমন সিদ্ধান্তে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
করোনা মাহামারির কারণে দুই বছর লোকসান গুণতে হয়েছে তাদের। সেই ধাক্কা কাটাতে কিছুদিন আগে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করলেও সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন। সেজন্য ঈদের আগ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাও সম্ভব না হলে অন্তত রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান খোলা চান ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রোববার (১৯ জুন) সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান জানান, রাত আটটার পর দোকানপাট বন্ধ রাখতে ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি অনুশাসন দিয়েছিল। সেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য সারাদেশের দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা সোমবার থেকে কার্যকর করা হবে।’ তবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রাত আটটার পরও খোলা থাকবে।
সেগুলো হলো- ডক, জেটি, স্টেশন অথবা বিমানবন্দর এবং পরিবহন সার্ভিস টার্মিনাল অফিস, প্রধানত তরি-তরকারি, মাংস, মাছ, দুগ্ধ জাতীয় সামগ্রী, রুটি, পেষ্ট্রি, মিষ্টি এবং ফুল বিক্রির দোকান, ওষুধ, অপারেশন সরঞ্জাম, ব্যান্ডেজ অথবা চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান, দাফন ও অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির দোকান, তামাক, সিগারেট, পান-বিড়ি, বরফ, খবরের কাগজ, সাময়িকী বিক্রির দোকান এবং দোকানে বসে খাওয়ার জন্য নাশতা বিক্রির খুচরা দোকান, খুচরা পেট্রোল বিক্রির জন্য পেট্রোল পাম্প এবং মেরামত কারখানা নয় এমন মোটর গাড়ির সার্ভিস স্টেশন, নাপিত এবং কেশ প্রসাধনীর দোকান, যেকোনো ময়লা নিষ্কাশন অথবা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যেকোনো শিল্প, ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান যা জনগণকে শক্তি, আলো-অথবা পানি সরবরাহ করে। এছাড়াও ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবার দোকান, সিনেমা অথবা থিয়েটার।
তবে ঈদ পর্যন্ত সরকারকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন এফবিসিসিআই।
সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে গত শনিবার (১৮ জুন) এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, উৎসবকেন্দ্রীক কেনা-বেচায় মূলত সন্ধ্যার পরই অফিস ফেরত ক্রেতাদের সমাগম শুরু হয়। এমন প্রেক্ষাপটে রাত আটটা পর্যন্ত কেনা-বেচা সীমিত করা হলে দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী বিপদে পড়বেন, একইসঙ্গে ক্রেতা সাধারণকেও ভোগান্তি পোহাতে হবে।
এদিকে রাত ৮টায় দোকান বন্ধ হলে অন্তত দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘মার্কেটগুলোতে বড় বড় এসি চলে। লাইটও জ্বালানো হয়। রাত আটটার পর যদি এগুলো বন্ধ করা যায় তাহলে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম প্রয়োজন হবে।
তিনি বলেন, সন্ধ্যায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় আমাদের তেলভিত্তিক বেশি দামের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হয়। জ্বালানিও বেশি খরচ হয়। ফলে রাত আটটায় সব বন্ধ রাখলে বিপুল অর্থের সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য ও উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সব অনুষঙ্গের পাশাপাশি রাত আটটার মধ্যে সকল বেসরকারি অফিস, দোকানপাট, বাজার (মার্কেট), শপিং মল ইত্যাদি বন্ধ করা প্রয়োজন। এ শহরেরও একটু বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে।
ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকাবাসীর কিছু নিয়ম-নীতি পরিপালন করা একান্ত আবশ্যক। না হলে যতই বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হোক না কেন, আমরা যতই স্বপ্ন দেখি না কেন, সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ন করা সম্ভব হবে না, যদি না এখনই ঢাকামুখী জনস্রোত রোধ করা যায়। বাস্তবিকতার নিরিখে এটি সুস্পষ্ট যে, ঢাকা শহর দুই কোটির বেশি জনগোষ্ঠীর ভার বহনে অক্ষম। এই শহরে দুই কোটির বেশি জনগোষ্ঠীকে ধারণ করার সক্ষমতা নেই। কিন্তু প্রতিনিয়ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত জনজীনে তার প্রভাবও পড়ছে। তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরার মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হবে বলে জানান তিনি।