ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলবে ২১টি করে ফেরি-লঞ্চ
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে পাঁচটি ফেরিঘাট সচল রাখার পাশাপাশি চলবে ২১টি করে ফেরি ও লঞ্চ।
এছাড়া ঈদের আগে-পরে ঘরমুখো ও ঢাকামুখী যাত্রীদের সুবিধার্থে সাতদিন বন্ধ থাকবে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ঈদ উপলক্ষে ঘাটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, মাওয়া ও কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছেন প্রশাসনসহ ঘাট সংশ্লিষ্টরা। ফলে যাত্রী হয়রানি ও দুর্ভোগ কমাতে বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএসহ স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীসহ প্রশাসনের কর্তারা।
আর রাতে যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তার জন্য ঈদের তিনদিন আগে থেকে লঞ্চ ও ফেরিঘাটসহ আশপাশের এলাকায় লাইটিং ও টয়লেটের ব্যবস্থা করবে বিআইডব্লিউটিএ। এছাড়া যাত্রী হয়রানি বন্ধে ভাড়া মনিটরিংয়ের পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে প্রশাসন। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘাট এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে সভায় জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী। এসময় অন্যদের মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক খান, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম মণ্ডল, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
রাজবাড়ী জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. মুরাদ হাসান বলেন, বাসভাড়া সমন্বয় করে নেওয়া হবে। ঈদের আগেই ভাড়ার চার্ট টানানো হবে।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সুপারভাইজার মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমানে ১৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। ঈদের আগে ও পরে ২১টি লঞ্চ চলবে এবং সব লঞ্চের ফিটনেস আছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ঈদে সাধারণত যাত্রী ও ছোট গাড়ির চাপ বেশি থাকে। ফেরি ঘাটে ভিড়লে যাত্রী ও ছোট গাড়ি ওঠা নামায় একটা জটলা বাধে। ট্রাফিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি ক্লিয়ার রাখতে পারলে যাত্রী হয়রানি ও ভোগান্তি কোনোটাই হবে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এই রুটে ১৯টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদে আরও দুটি ফেরি বহরে যুক্ত হয়ে ছোট-বড় মোট ২১টি ফেরি চলাচল করবে। ফেরিগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে কোনো সমস্যা হবে না।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা বন্দরের পোর্ট অফিসার শাহ আলম মিয়া বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে নাব্যতা সংকট নেই। ঈদে এসব রুটে ৩৩টি লঞ্চ ও প্রায় ৭০টি স্পিড বোট চলাচল করবে এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার উভয় প্রান্তে পাঁচটি করে ফেরিঘাট সচল থাকবে। বর্তমানে দৌলতদিয়ায় চারটি ঘাটের সঙ্গে আরও একটি ঘাট প্রস্তুত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে পাঁচটি ঘাট সচল থাকবে। নতুন করে ২ নম্বর ঘাট প্রস্তুত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি ইচ্ছা করলে ঘাটটি ব্যবহার করতে পারবে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ফেরির সংখ্যা ঠিক থাকলে ও যথাযথভাবে চলাচল করলে ঈদে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া লঞ্চ ২০/২২টি চললে যাত্রীরা ভালোমতো ফিরতে পারবেন। ঘাট এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি রোধে টহলের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ থাকবে। যাত্রীরা যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে এবং ঈদ শেষে কর্মস্থলে যেতে পারেন সেজন্য পুলিশ সব করবে। ঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ থাকবে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ঈদে ঘরমুখো ও ঢাকামুখী যাত্রীদের সেবা দিতে সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আশা করছি, এবার ভোগান্তি ও হয়রানি ছাড়াই যাত্রীরা নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী বলেন, যার যার দ্বায়িত্ব সে সে পালন করলে এবং বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএসহ সবাই আন্তরিক হয়ে কাজ করলে অন্যবারের মতো এবারও দৌলতদিয়ায় কোনো ভোগান্তি হবে না।