ইয়াসের তাণ্ডবে ভেসে গেল পশ্চিমবঙ্গের ৬৬ বাঁধ
ভারতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ক্রমশ এগিয়ে আসছে স্থলভূমির দিকে। নবান্ন থেকে পরিস্থিতির দিকে নজরদারি চালানো হচ্ছে। সারারাত নবান্নেই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি নবান্নেই থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।
মমতা বলেন, ইতোমধ্যেই অনেকগুলো বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বেশিরভাগ অঞ্চলই প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১৫ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, কলকাতা, সংলগ্ন জেলা হুগলি, নদিয়া এসব জায়গায় ঘণ্টায় ৭৫ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিবেগে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়। উপকূলবর্তী এলাকায় বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইয়াসের তাণ্ডবে বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে পড়েছে। নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৫টি বাঁধ ভেঙে গেছে। অপরদিকে পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি বাঁধ ভেঙেছে। দিঘা থেকে অনেক লোককে সরানো হয়েছে। দেড় লাখ মানুষকে সেখান থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে। আরও লোকজনকেও সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। দিঘার জেলা প্রশাসক করোনা আক্রান্ত হয়েও সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার রাত থেকেই দিঘায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতাও বেড়ে চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির তীব্রতাও বেড়েছে। সেই সঙ্গে দিঘা ও নিউ দিঘায় গার্ডরেল ছাপিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। এর ফলে বুধবার সকালেই জলমগ্ন হয়ে গেছে দিঘার মূল শহর। এমনকি জলমগ্ন দিঘা থানাও। দিঘার বাজার এলাকা ৫ থেকে ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।
তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও নিরবচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। কলকাতা থেকে সাড়ে ১১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে।
২০ জেলার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সব জেলার অবস্থা প্রতি মুহূর্তে জেনে নিচ্ছেন তিনি। কী করতে হবে টেলিফোনে তার নির্দেশনা দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে যাতে ন্যূনতম প্রাণহানিও না ঘটে তা নিশ্চিত করা। তিন লাখ কর্মী ইয়াস মোকাবিলায় মাঠে নেমেছেন।
এদিকে ওড়িশায় ইতোমধ্যেই আঘাত হেনেছে ইয়াস। রাজ্যের বালেশ্বরের কাছে ধামরা উপকূলে ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বেগে এটি আছড়ে পড়ছে। ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার হতে পারে। আগামী ৩ ঘণ্টা ওড়িশাসহ ভারতের উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চলে তাণ্ডব চালাবে এই ঘূর্ণিঝড়।