ইসির চুরি যাওয়া ল্যাপটপসহ হালনাগাদকর্মী গ্রেপ্তার
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নির্বাচন কমিশনের চুরি যাওয়া সেই ল্যাপটপসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি ‘আউট সোর্সিংয়ের’ মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজে যুক্ত ছিলেন।
গ্রেপ্তার মোস্তফা ফারুক (৩৬) ফেনী জেলা সদরের লস্করহাট দমদমা এলাকার মো. ইলিয়াছের ছেলে। চট্টগ্রামের হামজারবাগের মোমিনবাগ আবাসিক এলাকায় এক বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মোস্তফা এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত। তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি নির্বাচন কমিশনের চুরি যাওয়া ল্যাপটপ।
মোস্তফা ফারুকের কাছ থেকে জব্দ করা দুটি পেনড্রাইভে রোহিঙ্গাদের তথ্য এবং নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সর্বশেষ বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অধীনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে কাজ করেছিলেন মোস্তফা।
তার কাছ থেকে ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের একটি মডেম, আইডি কার্ড লেমিনেটিং করার ৫০টি কাগজ, তিনটি সিগনেটার প্যাড ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে বলে উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ জানান।
তিনি বলেন, এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় এর আগে গ্রেপ্তার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মোস্তফার তথ্য পান তারা। এর ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসবাদের জন্য বৃহস্পতিবার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়।
“পরে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোস্তফা ফারুককে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে যে দুটি ল্যাপটপ পাওয়া গেছে তার মধ্যে একটি তাদের চুরি যাওয়া ল্যাপটপ বলে শনাক্ত করেছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।”
ওই ল্যাপটপ তার বাসায় কীভাবে গেল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ।
ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৭-২০০৮ সালে ব্যবহৃত কিছু অকেজো ল্যাপটপ নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় আরও অন্তত পাঁচটি ল্যাপটপ হারিয়ে যায়। যার দুটি জালিয়াত চক্রের হাতে পড়ে বলে তদন্ত দলের সন্দেহ।
এক রোহিঙ্গা নারী সম্প্রতি ভুয়া এনআইডি সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে পাসপোর্ট নিতে গিয়ে ধরা পড়ার পর জালিয়াত চক্রের খোঁজে নামে নির্বাচন কমিশন। রোহিঙ্গা সন্দেহে অর্ধশত এনআইডি বিতরণ আটকে দেয় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ।এরপর কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে দুই দালালকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনকে আটক করে পুলিশ। তার কাছ থেকে সেই ল্যাপটপ দুটির একটি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বাদী হয়ে জয়নালসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জয়নাল পুলিশকে বলেন, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পের কাজে নিয়োগ পাওয়া সাগর ও সত্য সুন্দর নামে দুই ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্রে তিনি সাগরের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকায় ওই ল্যাপটপ কেনেন।
নির্বাচন কমিশনের তদন্ত দলকে জয়নাল বলেছেন, প্রতি শুক্র, শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে তিনি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার ও সিগনেচার প্যাড গোপনে তার বাসায় নিয়ে যেতেন। বাসায় বসেই এসব সরঞ্জাম দিয়ে তথ্য তৈরি করে ঢাকায় সাগরের কাছে পাঠাতেন ই মেইলের মাধ্যমে।
সাগর নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে অবৈধভাবে ঢুকে তথ্য আপলোড এবং যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রিন্ট কপি এসএ পরিবহনের মাধ্যমে জয়নালের কাছে পাঠিয়ে দিতেন।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোস্তফা ফারুক কোতোয়ালি থানা নির্বাচন অফিসের অধীনে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন থানা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ।
এরপর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে মোস্তফা ফারুকের আসা-যাওয়া ছিল। ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হলে মোস্তাফা ফারুককে আবারও বিভিন্ন উপজেলায় টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত জুন থেকে চলতি মাস পর্যন্ত মোস্তফা কর্ণফুলী, আনোয়ারা. রাঙ্গুনিয়া, রউজান ও বোয়ালখালী উপজেলায় আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করেছেন বলে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান।