ইসলামবাগের তিন খুনে একজনের ফাঁসির রায়
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঢাকার চকবাজারের পশ্চিম ইসলামবাগে তিন বছর আগে শাশুড়ি, শ্যালিকা ও ভাগ্নিকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফারহানা ফেরদৌস মঙ্গলবার আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আসামি আল ইসলাম জীবনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে রায়ে। রায় ঘোষণার পর আসামি জীবনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান এ আদালতের পেশকার গোলাম নবী। পশ্চিম ইসলামবাগের বাসিন্দা রাশিদা বেগম, তার মেয়ে সীমা ও নাতনি বন্যাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ২০১৬ সালে জীবনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রাশিদা বেগম তার দুই মেয়ের মধ্যে সুমির সঙ্গে শরীয়তপুরের জাজিরা থানার নূরুল হক সরদারের ছেলে আল ইসলাম জীবনের বিয়ে দেন। জীবন ও সুমির দুই সন্তানের নাম জুঁই ও সানী। দ্বিতীয় সন্তান সানীর জন্মের সময় সুমির মৃত্যু হয়। তার শেষ ইচ্ছা অনুসারে রাশিদা বেগম দুই নাতি-নাতনিকে নিজের কাছে রাখতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন।
আদালত তখন বাচ্চাদের রাশিদা বেগমের কাছে রাখার আদেশ দেয়। তার আরেক মেয়ে সীমা, তার স্বামী সোহাগ এবং তাদের মেয়ে বন্যাও থাকতেন ওই বাসায়। জীবন বিভিন্ন সময়ে বাচ্চাদের দেখার জন্য শাশুড়ি রাশিদা বেগমের বাসায় যাতায়াত করতেন। ২০১৬ সালের ৪ জুলাই দুপুরে তিনি ওই বাসায় নিয়ে সন্তানদের নিয়ে যেতে চাইলে কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে রাশিদা বেগমকে রামদা নিয়ে কুপিয়ে জখম করেন জীবন। সীমা ও বন্যা তাকে ঠেকাতে গেলে জীবন তাদেরও কুপিয়ে জখম করেন। জামাতার ওই আক্রমণে রাশিদা বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। সেদিন বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বন্যা। আর তার মা সীমার মৃত্যু হয় ৬ জুলাই।
রাশিদা বেগমের ছোট ভাই সাহাবুদ্দিন ওই বছরের ৬ জুলাই চকবাজার থানায় জীবনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ৯ অগাস্ট গ্রেপ্তার হওয়ার পর জীবন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল হক ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ২০১৭ সালের ৯ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালতে জীবনের বিচার শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাজহারুল হক জানান, বাদীপক্ষের ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্য শুনে আদালত মঙ্গলবার জীবনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করে। ৯১ পৃষ্ঠার এই রায়ের সার সংক্ষেপ পড়তে বিচারক সময় নেন প্রায় ২০ মিনিট। মামলার বাদী সাহাবুদ্দিন এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত দণ্ড কার্যকরের দাবি জানান। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিল আহম্মেদ বলেন, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।