ইসরায়েলের কট্টরপন্থী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিলেন নেতানিয়াহু
সরকার গঠন নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর অবশেষে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিলেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সবচেয়ে কট্টর ডানপন্থী রক্ষণশীল জোট সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসলেন কট্টরপন্থী এই রাজনীতিক।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে নতুন সরকার গঠনের বিষয়টি আস্থা ভোটে পাস হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন নেতানিয়াহু। আস্থা ভোটে সংসদের ১২০ সদস্যের মধ্যে ৬৩ জন নতুন সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৫৪ জন।
নেতানিয়াহুর এই শপথগ্রহণ ইসরায়েলের ক্ষমতায় সবচেয়ে কট্টরপন্থীদের প্রত্যাবর্তন এবং এমন একটি সরকারের আগমন ঘটিয়েছে; যা ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি বামপন্থী ইসরায়েলিদের মাঝে ভয়ের সৃষ্টি করেছে।
৭৩ বছর বয়সী নেতানিয়াহু এর আগে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ এবং তারপর ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বৃহস্পতিবারের আস্থা ভোটের আগে ইসরায়েলি সংসদের অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি।
সরকার গঠনের জন্য ইসরায়েলের সবচেয়ে কট্টরপন্থী একাধিক দলের সাথে জোট গড়ে নেসেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন নেতানিয়াহু। সংসদে ভাষণ দেওয়ার সময় বিরোধিরা তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন। বিরোধী দলগুলো নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় তাকে উদ্দেশ্য করে ‘দুর্বল’, ‘দুর্বল’ বলে স্লোগানও দেন।
ইসরায়েলের নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের অবসানই তার সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। একই সাথে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ এবং ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
নেতানিয়াহুর শপথ গ্রহণের বিরোধিতা করে পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলের সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন বামপন্থী রাজনীতিকরা। বিক্ষোভস্থান থেকে আল জাজিরার প্রতি সারা খাইরাত বলেন, ‘এই সরকার গঠন আগের যেকোনও সরকারের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। ইসরায়েলের নতুন এই সরকার সবচেয়ে কট্টর-অর্থোডক্স, কট্টর-ইহুদি ও কট্টর-জাতীয়তাবাদীদের জোটের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু এখনও অভ্যন্তরীণ সংকটের বিষয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই বিষয়ে তিনি ইসরায়েলিদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সারা খাইরাত বলেছেন, দ্রব্য মূল্য হ্রাস এবং অর্থনৈতিকভাবে যারা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
গত চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে চলতি বছরে ইসরায়েলে পঞ্চমবারের মতো সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১ নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয় রাজনৈতিক দলগুলো। যে কারণে ইসরায়েলের ৭৪ বছরের ইতিহাসে কট্টর ডানপন্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে জোট সরকার।
নির্বাচনের ফলাফলে তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসেবে ইহুদিবাদি জোট— যা বেজালেল স্মোট্রিচের নেতৃত্বাধীন ইহুদি পাওয়ার পার্টি ও ইতামার বেন-গভির নেতৃত্বাধীন একই নামের পার্টিকে এক মঞ্চে হাজির করেছে।
আর বিতর্কিত এই দুই রাজনীতিক ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বার বার সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার জন্য পরিচিত এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনে তাদের উদ্দেশ্যের কথা প্রকাশ্যেই বলে আসছেন।
গত বছর স্মোট্রিচ বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলে ভুলবশত এসেছে— কারণ (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) বেন-গুরিয়ন তার কাজটি শেষ করে যেতে পারেনি। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদেরকে ইসরায়েল থেকে বিতাড়িত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।
এর আগে, ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ‘ইসরায়েলের প্রতি অবিশ্বাসী’ বলে আখ্যায়িত করে নির্বাসনের আহ্বান জানিয়েছিলেন বেন-গভির। শুধু তাই নয়, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সবসময় সাথে বন্দুক রাখারও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য প্রায়ই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং সরকারের সমালোচনা করেন এই রাজনীতিক।
যাদেরকে পশ্চিম তীরে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলি সেই রাজনীতিবিদদের নীতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি— ইতোমধ্যে সেখানে চরম উত্তেজনায় রূপ নেওয়া পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।