ইলিশ আহরণে সব ফাঁস জাল নিষিদ্ধ
ইলিশ আহরণে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশে দুই দশমিক ৬ ইঞ্চি অপেক্ষা ছোট ফাঁসের যে কোনো ধরনের ফাঁস বা ফাঁসি জাল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। স্থানীয়ভাবে ১৩ নামের ফাঁস জাল নিষিদ্ধ করে বুধবার (১৫ জুলাই) গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ইলিশ আহরণের জন্য ৬.৫ সেন্টিমিটার (২.৬ ইঞ্চি) অপেক্ষা ছোট ফাঁস বিশিষ্ট ফাঁস জাল যে নামেই অবিহত হোক না কেন, সব জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
গেজেটে জিরো সুতার জাল, দুই সুতার জাল, তিন সুতার জাল, নাইলন জাল, সুতার জাল, জাল, ভাসমান জাল, ইলিশ/ইলশে জাল, পকেট/পোকা জাল, চান্দি/ছান্দি জাল, কোনা জাল, গুলতি/খোটা জাল, সাইন জাল ছাড়াও এসব জালের মতো ইলিশ আহরণের যে কোনো নামের জাল নিষিদ্ধ করা হয়।
গেজেটে জালের ফাঁস পরিমাপের পদ্ধতি চিত্রসহ বলে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, একটি ফাঁসের দু’টি বিপরীত প্রান্ত বিপরীতমুখীভাবে টেনে পরিমাপ করতে হবে।
দ্য প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস অ্যাক্ট, ১৯৫০ এর আওতায় এ গেজেট জারি করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, সারাবিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশ আহরিত হয় এদেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। বিগত দশ বছরে ইলিশ উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। ৬ লাখ মানুষ ইলিশ-আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০-২৫ লাখ মানুষ ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ-উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে, যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপিতে এর অবদান শতকরা ১ শতাংশ।
দেশের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের ভৌগলিক নির্দেশক নিবন্ধন দিয়েছে। ইলিশ-আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে সবার শীর্ষে। পৃথিবীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের অধিক ইলিশ উৎপাদনকারী হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিত।
২০০২-০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন উদ্বেগজনকভাবে কমে ১ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতাগ্রহণের সময় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন থাকলেও সরকারের ব্যবস্থাপনায় তা বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তুলনায় ৯ বছরের ব্যবধানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ৭৩ শতাংশ বেড়েছে।
ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, ইলিশ আহরণ বন্ধসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সরকার।
ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রের অন্তর্গত সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রতিবছর ২২ দিন ইলিশ-আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকে। এই সময়ে মা ইলিশ ৮০ শতাংশ ডিম পাড়ে।
ইলিশ ডিম পাড়ে মূলত মিঠাপানিতে। তাই আশ্বিনের পূর্ণিমার চারদিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮ দিন মোট ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, নদীর মোহনাসহ যেসব জেলা ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়, সেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।