ইরানি সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলার হুমকি, তোপের মুখে ট্রাম্প
ইরানের সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোতে হামলার হুমকি দিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেমানি নিহত হওয়ার পর ইরান ‘চরম প্রতিশোধ’ নেওয়ার অঙ্গীকার জানালে প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প ইরানের সাংস্কৃতিক স্থাপনাসহ ৫২ লক্ষ্যস্থলে পাল্টা হামলার হুমকি দেন।
কিন্তু ইরানের এ ধরনের স্থানগুলোর সুরক্ষিত থাকবে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান, উভয়েই যুদ্ধসহ সকলসময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার আন্তর্জাতিক ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে। আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী সাংস্কৃতিক স্থানগুলোকে সামরিক হামলার লক্ষ্যস্থল করা যুদ্ধাপরাধ।
সোলেমানির হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক বা দেশটির স্বার্থের কোনো ক্ষতি করলে ‘ইরান ও ইরানের সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ’ স্থানগুলোতে ‘খুব দ্রুত কঠোর আঘাত’ হানা হবে বলে হুমকি দেন ট্রাম্প।
পরে ‘যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন মেনেই কাজ করবে’ বলে জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
কিন্তু ট্রাম্প ফের তার হুমকি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “আমাদের লোকদের হত্যা করার অনুমতি তাদের দেওয়া হয়েছে, আমাদের লোকদের নির্যাতন ও বিকলাঙ্গ করার অনুমতি তাদের দেওয়া হয়েছে, তাদের রাস্তায় পাশে বোমা পেতে রাখার আর আমাদের লোকদের উড়িয়ে দেওয়া অনুমতি দেওয়া হয়েছে- আর আমরা তাদের সাংস্কৃতিক স্থানগুলো স্পর্শ করতে পারবো না? এভাবে তো কাজ হয় না।”
সোমবার হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা কেলিয়ান কনওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে বলেন, “প্রেসিডেন্ট সাংস্কৃতিক স্থানগুলোকে লক্ষ্যস্থল করার কথা বলেননি, শুধু প্রশ্ন তুলেছেন।”
তিনি বলেন, “ইরানের এমন অনেক কৌশলগত সামরিক স্থাপনা আছে যেগুলোকে আপনারা সাংস্কৃতিক স্থানও বলতে পারেন।”
পরে নিজের এমন বক্তব্যেরও ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হন তিনি।
এরপর একইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পারকে জিজ্ঞেস করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সাংস্কৃতি স্থানগুলোকে লক্ষ্যস্থল করবে কি না। উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা সশস্ত্র যুদ্ধের আইন অনুসরণ করবো।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের এসব মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলে বলেন, বিশ্বের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার ১৯৭২ ঘোষণায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র, উভয়েই স্বাক্ষর করেছে। তারা যুদ্ধের সময় সাংস্কৃতিক সম্পদ রক্ষার ১৯৫৪ সালের ঘোষণায়ও স্বাক্ষর করেছে।
ট্রাম্প ইসরায়েলের বিরোধিতার অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউনেস্কো থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক দলীয় সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও ক্রিস মার্ফি ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, “ট্রাম্প যুদ্ধাপরাধ করার হুমকি দিচ্ছেন।”
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফও একই ধরনের মন্তব্য করে ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন।
সোমবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, সাংস্কৃতিক স্থানগুলো আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত এবং আইনটিকে শ্রদ্ধা করা হবে বলে ব্রিটেন আশা করে।
জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ইরাকের বিভিন্ন পুরাকীর্তি ও সিরিয়ার পালমিরার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতিসাধন করার পর বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছিল। তার আগে আফগানিস্তানের বামিয়ানে তালেবান জঙ্গিরা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করার পরও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।