ইরাক যুদ্ধের হোতা মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মৃত্যু
আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধের প্রধান পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড মারা গেছেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে নিজ বাড়িতে ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। এক টুইট বার্তায় মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে রামসফেল্ডের পরিবার। ১৯৭৫ সালে মাত্র ৪৩ বছরে মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়েছেন রামসফেল্ড। গেরাল্ড ফোল্ড ৩৮ তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথমে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। দায়ীত্ব পালন করেন ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত।
এরপর পুনরায় তাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩ তম প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। দায়ীত্ব পালন করেন ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তার এ সময়কার আমল নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক।
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলার পর তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের প্রস্তাবক তিনি। শুরু করেন আফগানিস্তান যুদ্ধ। ২০১১ সাল থেকে চলা যুদ্ধ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি আফগান সেনা ও পুলিশ নিহত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ। এছাড়া আরও প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিদেশি সেনা নিহত হয়েছেন।
এছাড়া পরবর্তীকালে ইরাকে সাদ্দাম হুসেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূল রূপকার ডনাল্ড রামসফেল্ড। তার প্রত্যক্ষ উস্কানিতে ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র দাবি ছিল, ইরাকে তখনকার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে বিধ্বংসী অস্ত্রের মজুত আছে। পরে অভিযান চালিয়ে ধ্বংশ করে দেয়া হয় ইরাক।
রামসফেল্ডের মৃত্যুর পর সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ তাকে একজন বুদ্ধিমান, সৎ এবং অফুরান শক্তিধর মানুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, রামসফেল্ড কখনো দায়িত্বকে অবহেলা করেননি। বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, সীমাহীন শক্তি, তদন্তকারী বুদ্ধিমত্তা এবং দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতি পালনে যে একনিষ্ঠ ইচ্ছা তার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন সেক্রেটারি রামসফেল্ড।
১৯৩২ সালে শিকাগোয় জন্ম নেন রামসফেল্ড। এরপর পড়াশোনা করেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৪ থেকে ৫৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন নেভিতে কাজ করেন তিনি। এরপর যোগ দেন রাজনীতিতে। মধ্যবর্তী সময়ে কিছুদিন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসেবেও কাজ করেছেন।
রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দিয়ে একাধিকবার কংগ্রেসে নির্বাচিত হয়েছেন রামসফেল্ড। বরাবরই বুশের সমর্থক ছিলেন তিনি। শেষ জীবনেও রিপাবলিকানদের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন রামসফেল্ড। ২০১১ সালে লেখেন একটি স্মৃতিকথা নোন অ্যান্ড আননোন। যাতে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গান ডোনাল্ড রামসফেল্ড।