ইমন, দিদার, কিশোর, মুশতাককে রিমান্ডে চায় পুলিশ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন ও ‘রাষ্ট্রচিন্তার’ সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং ব্যবসায়ী মুশতাক আহমদকে সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ
তবে রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী বৃহস্পতিবার তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, আদালত খোলার পর রিমান্ড শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ ঠিক করে দেওয়া হবে।
বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান ইমনের (৫২) ভাই ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নানকে ২০১৬ সালে জঙ্গিরা হত্যা করেছিল।
বুধবার ঢাকার বনানী থেকে গ্রেপ্তার করার পর রাতে ইমনকে রমনা থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়। একই সঙ্গে থানায় তুলে দেওয়া হয় আগের দিন বাসা থেকে তুলে নেওয়া দিদারুল ভূঁইয়াকে, যিনি দুর্যোগ সহায়তা মনিটরিং সেল ও ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ নামের একটি সংগঠনের সদস্য।
তাদের দুজনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়, যে মামলায় ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং ব্যবসায়ী মুশতাক আহমদও আসামি।
কার্টুনিস্ট কিশোর রাজনৈতিক কার্টুন এঁকে থাকেন, আর ব্যবসায়ী মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে সক্রিয়।
র্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিকের করা এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় কিশোর ও মুশতাককে মূল আসামি করে মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে; তার মধ্যে বিদেশে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ও সাংবাদিক তাসনিম খলিলের নামও রয়েছে।
অন্য আসামিরা হলেন- জুলকারনাইন, আসিফ ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ, সাহেদ আলম ও ফিলিপ শুমাখার।
ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন জানান, ইমন ও দিদারুলকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই জামসেদুল ইসলাম।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এ সময় রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা কর জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু রিমান্ড শুনানির কাগজপত্র না থাকায় দুই শুনানিই পিছিয়ে দেন বিচারক।
এদিকে আগের দিন কারাগারে পাঠানো কার্টুনিস্ট কিশোর ও ব্যবসায়ী মুশতাককেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন এস আই জামসেদুল।
তাদের ক্ষেত্রেও বিচারক একই আদেশ দেন বলে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কমৃকর্তা এস আই নিজাম উদ্দিন ফকির জানান।
কিশোরকে মঙ্গলবার কাকরাইল এবং মুশতাককে লালমাটিয়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পরে রমনা থানায় হস্তান্তর করে র্যাব।
মামলায় যে অভিযোগ
র্যাবের করা ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফেইসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, ‘I am Bangladeshi’ পেইজ থেকে রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হয়। ওই পেইজের এডিটর সায়ের জুলকারনাইন, আহমেদ কবির কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, মুশতাক আহমেদ, স্বপন ওয়াহিদ দীর্ঘদিন পেইজটি পরিচালনা করছেন।
কিশোরকে গ্রেপ্তারের বিবরণ দিয়ে এজহারে বলা হয়, আটকের সময় তার বাসা থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক, একটি সিপিইউ, ২০০টি সিডি উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা মোবাইল ফোনের একটিতে `আমি কিশোর্’ আইডি লগইন করা ছিল।
“আলামত পর্যালোচনা করে র্যাব রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, করোনাভাইরাস, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পেয়েছে।”
এছাড়া হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে তাসনিম খলিল, সায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার কথাও বলা হয় এজাহারে।
র্যাব বলছে, “সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়, করোনাভাইরাস, জাতির জনক, সরকার প্রধান, বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিশোরের কার্টুন ভাইরাল করার জন্য তাসনিম খলিল ইন্ধন দেন।”
তাসনিম খলিলের সঙ্গে কিশোরের ‘দীর্ঘদিনের যোগাযোগ’ বলে র্যাবের দাবি।
এজহারে বলা হয়, “তাসনিম খলিলের ফেইসবুকে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী ও এর প্রধানদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যসহ গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্যে পোস্ট দেওয়া হয়।”
এজহারে বলা হয়, কিশোরের দেওয়া তথ্যে মুশতাক আহমেদকে লালমাটিয়া থেকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি শাওমি ফোন, অ্যাপলের ম্যাক মিনি জব্দ করে।
“মুশতাক ও শায়ের জুলকারনাইনের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়।”
‘মাইকেল কুমির ঠাকুর’ নামে একটি বেনামী পেইজ থেকে রাষ্ট্রিবিরোধী গুজব ছড়ানো হয় বলে এজাহারে বলা হয়।
দিদারুল ও মিনহাজ ফেইসবুকে মুশতাকের ‘ফ্রেন্ড’ উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, “তাদের সাথে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”