ইন্দোনেশিয়া থেকে সরাসরি পণ্য আমদানির সুযোগ চায় বাংলাদেশ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে কতখানি এগিয়ে গেছে তা ইন্দোনেশিয়ার অনেক মানুষ কিংবা ব্যবসায়ীরা জানেন না। এর কারণ হলো- বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এ দেশে সরাসরি বাণিজ্য করতে আসেন না। ফলে দ্ইু দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে বিরাট ঘাটতি রয়ে গেছে। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পৃক্ত একাধিক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি করা হয় মাত্র ৫০ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে- বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে কোনো পণ্য সরাসরি আমদানি করতে পারে না। ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন পণ্য প্রথমে পাশের দেশ ভারতে পাঠানো হয়। সেখান থেকেই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ইন্দোনেশিয়ার পণ্য আমদানি করে।
ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের টাকা ভারতে চলে যায়। এই আমদানি কিংবা রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ কিংবা ইন্দোনেশিয়া কেউই সরাসরি লাভবান হয় না। ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করা পণ্যের তালিকা বেশ দীর্ঘ। এখানে পাম অয়েল কিংবা টায়ারের মতো বড় বাণিজ্যের পণ্য যেমন রয়েছে, তেমনি আছে সুপারির মতো ছোট বাণিজ্যের পণ্যও।
জানা গেছে, সাধারণত ইন্দোনেশিয়া থেকে পাথর, মার্বেল পাথর, কয়লা এবং পাম অয়েলসহ অন্য সব পণ্য প্রথমে ভারতে যায়। সেখান থেকেই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা আমদানি করে এসব পণ্য নিজ দেশে নিয়ে আসে।
ইন্দোনেশিয়া অন্য দেশ হয়ে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির কারণ প্রসঙ্গে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, অতীতে কিছু বাংলাদেশী সৎভাবে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করেননি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন।
তারা বলেন, ইন্দোনেশিয়া এতো বড় অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্বেও গত তিনবছরে বাংলাদেশ থেকে মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধি এখানে আসেননি। আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার জটিলতা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেননি। সরকার উদ্যোগ নিলে এ সমস্যা আর থাকবে না। এখান থেকে সরাসরি পণ্য কেনার সুযোগ মিলবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশ শুধু আমদানি করে না। প্রচুর পণ্য রপ্তানিও করে। বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে টুপি, পাগড়ি কিংবা কালো জিরার তেলের মতো পণ্য রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্যের রপ্তানি কারক ব্যবসায়ী এসবি সাইফুল জানান, স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও এসব পণ্যের বাজার এখানে আছে। তবে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় জটিলতার করণে সমস্যা হচ্ছেই।
ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) আজমল কবির জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্য ক্রমশ বাড়ছে। আমদানি রপ্তানিতে কিছু জটিলতা থাকলেও তা সমাধানে দুই দেশ আন্তরিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পে অনেক উন্নতি করেছে। এই খাতে ইন্দোনেশিয়া আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বি। এর পরেও আমাদের দেশে থেকে উৎপাদিত বিশ্বের বিভিন্ন ব্রান্ডের তৈরি পোশাক এখানে রফতানির সুযোগ আছে।
তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ওষুধ শিল্পের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চাইলে ওষুধ শিল্পে ইন্দোনেশিয়ায় একক আধিপত্য তৈরি করতে পারে। এখানে ওষুধ উৎপাদন খরচ কম। কিন্তু দাম বেশি। আমাদের চেয়ে অন্তত দ্বিগুন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত রিনা সুমারনো জানান, বাংলাদেশ নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সরকার এবং জনগণ খুবই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। এটা কাজে লাগানোর সুযোগ বাংলাদেশের আছে। তিনি বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। তার প্রমাণ- এবার ইন্দোনেশিয়ার আন্তর্জাতিক এক্সপোতে রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এসেছেন।