ইন্দোনেশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত ৪
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ইন্দোনেশিয়ায় সাগরতলে সংঘটিত এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পে দ্বীপ দুটির কয়েকশ ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, দেশটির জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার বরাতে শনিবার জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ভূমিকম্পের কয়েক মিনিটের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ সুনামি সতর্র্কতা জারি করে। দুই ঘণ্টা ধরে এ সতর্কতা বজায় থাকাকালে উপকূল বরাবর এলাকাগুলোর বাসিন্দারা উচুঁ এলাকার দিকে পালিয়ে যায়। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পটি রাজধানী জাকার্তায়ও অনুভূত হয়েছে। এ সময় নগরীর বহুতল ভবনগুলোতে থেকে লোকজন রাস্তায় নেমে আসে।
এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার মুখপাত্র আগাস উয়িবোও জানিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে সরে যাওয়ার সময় চার জনের মৃত্যু হয়, তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক ও অবসাদে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। আরও চার জন আহত হয়েছেন ও দুইশরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
লামপুং প্রদেশে প্রায় এক হাজার লোক প্রাদেশিক সরকারের দপ্তরে আশ্রয় নিয়েছিল। এরাসহ অন্যান্য যারা উঁচু এলাকাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের অনেকেই বাড়িতে ফিরে গেছেন বলে উয়িবোও জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্তি¡ক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্র সুমাত্রার বেতুং শহর থেকে প্রায় ২২৭ কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগরে।
উপকেন্দ্রটি সুন্দা চ্যুতি বরাবর ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। এই চ্যুতিতে ভূপৃষ্ঠের দুটি টেকটোনিক প্লেট একটি আরেকটির ওপর উঠে গিয়ে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে চলছে। এই মহাচাপে এখানে অত্যন্ত ভয়াবহ ভূমিকম্প সৃষ্টি হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে বলে মত গবেষকদের।
ইন্দোনেশিয়ার জিওফিজিক্স সংস্থার এক গবেষণায় ওই এলাকায় ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা শনাক্ত হয়েছে আর তাতে ২০ মিটার উঁচু সুনামি সৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করেছে উয়িবোও। তবে এই ভূমিকম্পটি কখন হবে তার ভবিষ্যদ্বাণী কেউ করতে পারেব না বলেও জানিয়েছেন তিনি। লোকজনকে সতর্ক থাকতে হবে, ভূমিকম্প সহনশীল বাড়ি বানাতে হবে, বলেছেন তিনি।
উপকূল বরাবর বসবাসকারী লোকজনকে সুনামির হুমকি মোকাবিলায় দক্ষ করে গড়ে তুলেতে তাদের সংস্থা কয়েকটি কর্মসূচী চালু করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান তথাকথিত প্যাসিফিক রিং অব ফায়ারের (প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা) ওপর। প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে থাকা এই রিং ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। এখানে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পের কোনো কোনোটিতে সুনামিও হয়।
ইন্দোনেশিয়ার সা¤প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প ও সুনামির ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর। ওই দিন ৯ দশমিক ৫ মাত্রার একটি মহাভূমিকম্পের পর বিশাল এক সুনামিতে ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় এলাকাগুলোজুড়ে প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার লোক নিহত হয়েছিল, যার মধ্যে এক লাখ ২৬ হাজার জন ইন্দোনেশিয়ায় নিহত হয়েছিল।
গত বছর সাগরে আনাক ক্রাকাতাউ আগ্নেয়গিরির একটি অংশ ধসে পড়ে তৈরি হওয়া আরেকটি সুনামিতে দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু শহরের অন্তত ৪৩০ জন বাসিন্দা নিহত হয়। এবারের ভূমিকম্পের কাছাকাছি এলাকায়ই ওই ঘটনাটি ঘটেছিল।