‘ইথিওপিয়া থেকে ছোড়া রকেট’ ইরিত্রিয়ার রাজধানীতে
ইরিত্রিয়ার রাজধানী আসমারায় ইথিওপিয়া থেকে ছোড়া তিনটি রকেট এসে পড়েছে বলে সেখানে নিযুক্ত আফ্রিকান পাঁচ কূটনীতিক জানিয়েছেন।
তাদের মধ্যে তিন জন জানিয়েছে, শনিবার রাতে ছোড়া এসব রকেটের মধ্যে অন্তত দুটি আসমারা বিমানবন্দরে আঘাত হেনেছে।
এতে ইথিওপিয়ার তিগ্রাই রাজ্যে স্থানীয় বিদ্রোহী বাহিনীগুলোর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর লড়াই আরও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইরিত্রিয়া ও তিগ্রাইয়ের অধিকাংশ টেলিযোগযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় এ হামলার খবর তারা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি। উভয় পক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছে তারা।
তিগ্রাইয়ের নেতা দেব্রেতশন জেব্রেমিশায়েল মঙ্গলবার অভিযোগ করে বলেছিলেন, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের সরকারকে সমর্থন জানিয়ে ইরিত্রিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে; তবে নিজের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি তিনি।
ওই সময় এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইরিত্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওসমান সালেহ মোহাম্মদ রয়টার্সকে বলেছিলেন, “আমরা এই লড়াইয়ের অংশ নই।”
দুই বছর আগে ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি হলেও ১৯৯৮-২০০০ সালের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে তাদের ভূমিকার জন্য ইরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ার্কি এখনো তিগ্রাই নেতাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন।
শনিবার সকালে তিগ্রাইয়ের ক্ষমতাসীন দল তিগ্রাই পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ) ইরিত্রিয়ার লক্ষ্যস্থলগুলোতে হামলার হুমকি দিয়েছিল।
দলটির মুখপাত্র গেতাশু রেদা স্থানীয় টেলিভিশন স্টেশনকে বলেছিলেন, “আসমারা ও মাসাওয়ার মধ্যে যে কোনো ধরনের সৈন্য চলাচলে বাধা দিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারি আমরা।”
লোহিত সাগরের তীরবর্তী মাসাওয়া ইরিত্রিয়ার একটি বন্দর শহর।
স্থানীয় বাহিনীগুলো সুদান ও ইরিত্রিয়ার সীমান্তে মোতায়েন কেন্দ্রীয় সেনাদের আক্রমণ করেছে, এমন অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনার জন্য প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তিগ্রাইতে জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী পাঠান ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। তারপর থেকে তিগ্রাইতে শুরু হওয়া লড়াইয়ে কয়েকশত লোক নিহত হয়েছে।
এ লড়াই আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ইথিওপিয়ার অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে ‘আফ্রিকার শিং’ হিসেবে পরিচিত পূর্ব আফ্রিকার এ অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন।
শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধের কারণে ওই অঞ্চলের ১৪ হাজার ৫০০ বাসিন্দা পালিয়ে প্রতিবেশী সুদানে আশ্রয় নিয়েছে।
শুক্রবার রাতে তিগ্রাইয়ের প্রতিবেশী ইথিওপীয় রাজ্য আমহারার দুটি বিমানবন্দরেও রকেট হামলা হয়েছিল। তিগ্রাইয়ে সেনা পাঠাতে এই বিমানবন্দর দুটি ব্যবহার করছিল ইথিওপিয়ার কর্তৃপক্ষ।
তিগ্রাইতে সরকারি বাহিনীর বিমান হামলার প্রতিশোধ নিতে এই বিমানবন্দর দুটিতে হামলা চালানো হয়েছে বলে টিপিএলএফ দাবি করেছে।
হামলার পর থেকে গনদার ও বিহার দার বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মী জানিয়েছেন।
“তিগ্রাইয়ের লোকজনের ওপর হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ আরও তীব্র হতে থাকবে,” টিপিএলএফের ফেইসবুক পেইজে বলেছেন দলটির মুখপাত্র গেতাশু।