ইতালিফেরতের পরিবারের ৩ সদস্য আক্রান্ত
ইতালিফেরত এক ব্যক্তির পরিবারের তিন সদস্যের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, নতুন আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজন নারী, বয়স ২২ বছর। আর দুইজন পুরুষ; একজনের বয়স ৬৫ বছর, অন্যজনের ৩২।
“নতুন আক্রান্ত তিনজনই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন এবং একই পরিবারের সদস্য। তারা ইতালি ফেরত একজনের কনটাক্টে এসেছেন। তিনিও ওই পরিবারের সদস্য এবং আগেই আক্রান্ত হয়েছেন।”
মহাপরিচালক বলেন, আক্রান্ত ওই তরুণীর মধ্যে উপসর্গ খুবই মৃদু। বাকি দুজনের জ্বর রয়েছে, তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া অন্য কোনো সমস্যা তাদের নেই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে এখন মোট ১৯ জনকে আইসোলেশনে রাখ হয়েছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৩ জন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বুধবারের ব্রিফিংয়ে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছিল।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছিলেন, সত্তরোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিদেশফেরত এক ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায়।
ওই বৃদ্ধের আগে থেকেই সিওপিডি (ফুসফুসের ক্রনিক রোগ) ছিল, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি জটিলতা ছিল। এছাড়া হৃদযন্ত্রে একবার স্টেন্টিংও হয়েছিল।
এতদিন অধ্যাপক ফ্লোরাই আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য দিয়ে আসছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নিজে ব্রিফ করতে আসেন।
ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলা হয়, অনিবার্য কারণে অধ্যাপক ফ্লোরা আসতে পারেননি। তবে তার একজন সহকর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় তাদের পরিচালক কিছুটা অসুস্থ বোধ করছেন।
অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ব্রিফিংয়ে বলেন , গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আর কারও মৃত্যু হয়নি, এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ওই একজনই আছে।
বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে তিনজন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানায় আইইডিসিআর।
ওই তিনজনের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে এসেছিলেন। ইতালি ফেরত একজনের পরিবারের সদস্য ছিলেন আক্রান্ত তৃতীয়জন। ওই সময় আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি আরও চারজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল।
এরপর গত ১৪ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও দুজন আক্রান্তের খবর জানান। ওই দুজন ইউরোপের দেশ ইতালি ও জার্মানি থেকে এসেছিলেন। তাদেরই একজনের মাধ্যমে পরিবারের এক নারী ও দুই শিশুর আক্রান্ত হওয়ার খবর আইডিসিআর জানায় সোমবার।
আর মঙ্গলবার আরও দুইজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়ে বলা হয়, তাদের একজন হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন, অন্যজন বিদেশফেরত একজনের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এরপর বুধবার নতুন করে একজন নারী ও তিনজন পুরুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানান অধ্যাপক ফ্লোরা। তাদের মধ্যে একজন আগে আক্রান্ত একজনের পরিবারের সদস্য। বাকি তিনজন বিদেশফেরত, দুজন ইতালি থেকে এবং একজন কুয়েত থেকে এসেছেন।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে প্রথম দফার তিনজন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন; হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৩ জন। আর একজনের মৃত্যু হয়েছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৫৮টি দেশে ২ লাখ ১৮ হাজার মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন; মৃতের সংখ্যা ৮৮০০ ছাড়িয়ে গেছে।