ইউএনওর ওপর হামলার পেছনে কারা, বের করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার পেছনের কারণ উদঘাটনের সঙ্গে হামলায় মদদদাতাদেরও খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনূর রশিদের সম্পূরক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে ইউএনওর যেই ঘটনা ঘটে গেছে সেটা কিন্তু তদন্ত করে দোষীদের কিন্তু গ্রেপ্তার করাও হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং বিষয়টা কি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিছু কিছু বলছে যে চুরি করার জন্য…শুধু চুরি না, এরসঙ্গে আরও কি কি ঘটনা থাকতে পারে সেগুলোও কিন্তু যথাযথভাবে দেখা হচ্ছে।”
গত বুধবার রাতে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে ইউএনওর বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা হয়।
গুরুতর আহত ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে ঢাকায় এনে জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মাথায় অস্ত্রোপচারের পর বর্তমানে তার ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সোমবার তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে।
ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনায় ভাই শেখ ফরিদ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে যে মামলা করেছেন তাতে এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এদের মধ্যে আসামি আসাদুল ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের সদস্য ছিলেন। হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে
হামলার পর ওয়াহিদা খানমকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা, তার চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থা সরকার করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আগেই বলেছি অপরাধী আমার চোখে অপরাধী। সে কোন দলের কে, কি আমি কিন্তু সেটা বিচার করি না। সেটা আপনারা দেখেছেন।
“প্রথম কথা আমি অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখি। সেখানে যদি আমার দলেরও লোক হয়, সমর্থক হয় তাকেও আমি ছাড়ি না, ছাড়ব না- এটা হল আমার নীতি। সেই নীতি নিয়ে আমি চলছি। ইতিমধ্যে যারা ধরা পড়েছে… তদন্ত করা হচ্ছে। পাশপাশি আরও তদন্ত করা হচ্ছে যে এই ঘটনার মূলে কি আছে? কেন এই ধরনের একটা ঘটনা ঘটল?”
করোনাভাইরাস মোকাবেলাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাজের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা এত আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে তাদেরকে এইভাবে আঘাত করে এটা তো কখনও গ্রহণযোগ্য না। ইতিমধ্যে অপরাধী শনাক্ত করা বা তাদেরকে ধরা হয়েছে এবং এর পেছনে তাদের সঙ্গে আরও কারা কারা আছে, কাদের মদদে করেছে, সেটাও কিন্তু তদন্ত করা হচ্ছে। এটা খুব ভালোভাবেই তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে কোনো ঘাটতি নেই এবং ঘাটতি হবে না। অপরাধী ঠিকই শাস্তি পাবে। সেই ব্যবস্থা করব, অন্তত এইটুকু আমি বলতে পারি।”
সংসদে প্রশ্ন করতে গিয়ে হারুনূর রশিদ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্তর চাইলে তিনি শুধু আমাদের পেছনের অতীত..ওই ১৪ বছর ..২০ বছরের অতীত…আমি মনে করি টানার দরকার নাই। ১৪ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতায় নাই। ১৪ বছর থেকে তো আওয়ামী লীগই ক্ষমতায়। এখন বর্তমান নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা কথা বললে আমার মনে হয় বেশি ভালো হবে।”
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি বলছেন, অতীত নিয়ে টেনে কথা বলি কেন? অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই আগামী দিনে চলার পথ নির্দিষ্ট করতে হবে। তা নইলে শিক্ষা হয় না। যে কারণেই অতীতকে স্মরণ করতে হয়।
“এখানে অতীত নিয়ে কথা না। ১৯৯১ সালে ঘুর্ণিঝড়ের কথা আমি বলেছি। সেই ঘূর্ণিঝড়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমরা তো দেখেছি। কত অবহেলার শিকার ছিল এদেশের মানুষ। ঠিক ১৯৭০ এ ঘূর্ণিঝড়ের পর যেরকম মানুষ অবহেলিত ছিল।
“সেসময় আমরা বিরোধী দলে থেকে, আমরাই আগে সেই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তারপরে সরকার গিয়েছিল। সরকার তো ঘুমাচ্ছিল। আর এই পার্লামেন্টে বলেছিল যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরে নাই। এটা বিএনপি আর খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল। এটা হল দুর্ভাগ্য। আমি ওটাই বলব অতীতকে স্মরণ করতে হবে তো। সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”