আসন্ন মন্দা মোকাবেলায় কৃষিতে জোর দেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
দেশের অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাস মহামারীর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় কৃষিকাজ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ঢাকা বিভাগের, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনাভাইরাস সারাবিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আশঙ্কা করছে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্ব মন্দা বা দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।”
ভাইরাসের বিস্তার রোধে প্রায় সব কিছু বন্ধ থাকলেও বেঁচে থাকার জন্য যেসব কাজ জরুরি, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে যেসব কাজ করা যায়, তা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“কৃষিকাজ আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। যেহেতু কৃষিকাজটা খোলা মাঠে হয়, সূর্যের তাপ বা খোলা বাতাস- এটা কিন্তু এই করোনাভাইরাস থেকে আমাদের মুক্তি দেয়। কাজেই কৃষিকাজটা যাতে চলমান থাকে সেই ব্যবস্থা আমরা নেব।”
অফিস-আদালতসহ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী অনেক মানুষ হঠাৎ করেই বেকার হয়ে পড়েছেন। আবার গ্রামে অনেক জায়গায় কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।এ পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দিনমজুর যারা কাজ পাচ্ছেন না, যান চলাচল শুরু হলে তারা আসছে ধান কাটার মৌসুমে ধান কেটে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।”
সামনে অর্থনীতির যে খারাপ সময় আসার শঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেজন্য ফসল উৎপাদনে আরও বেশি নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “একখণ্ড জমি যেন অনাবাদি না থাকে। যারা এখন ঘরে বসে আছেন, তারা টবে গাছ লাগান, ছাদে বাগান করেন বা নিজের জমি থাকলে সেখানে গাছ লাগান, বাগান করেন। সেই কাজগুলো কিন্তু আপনারা নির্বিঘ্নে করতে পারেন।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়াতে খোলা মাঠে বড় জায়গায় হাট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে পুরো বিশ্বে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সারাবিশ্বে ২৫০ কোটি মানুষ ঘরে বন্দি। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। একটা অদৃশ্য শক্তি, এমন একটা ভাইরাস যাকে কেউ চোখে দেখতে পারে না। কিন্তু তারই প্রভাবে সারাবিশ্ব যেন আজকে একটা জায়গায় চলে এসেছে।”
অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষের শঙ্কার কথা মাথায় রেখেই সরকার যে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ তৈরি করেছে, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
“কোনো রকম মন্দা আসলে আমরা যেন তা মোকাবেলা করতে পারি। আর সেটা শুধু এখনকার জন্যই না, আগামী তিন অর্থবছরে আমরা কীভাবে দেশের মানুষকে এই অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উদ্ধার করব, রক্ষা করব, সেই পরিকল্পনাও আমরা কিন্তু নিচ্ছি এবং সেভাবে প্রত্যেকটা পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। একটু আগাম আমরা কিছু কর্মসূচি নিয়ে নিচ্ছি।”
কাজ ছাড়া চলবে না, কিন্তু যে যাই করুক, নিজেকে সুরক্ষিত রেখে লোক সমাগম না করে তা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী