আরেকটু সুযোগ পেলে ভালো রেজাল্ট করতাম : প্রধানমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষাজীবনে লেখাপড়ার আরেকটু সুযোগ পেলে ‘ভালো’ ফল করতে পারতেন তিনি।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির একজন সংসদ সদস্য ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য বুয়েটে কোটা চালু এবং মেধাবীদের বিদেশে চলে যাওয়া বন্ধ করতে উদ্যোগ চাইলে জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
বিএনপির হারুনুর রশীদ প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, “মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছে, বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম থেকে যারা পাশ করছে। এটা বন্ধ করার উদ্যোগ নেবেন কি না। ব্যাপক বেকারত্ব দূর করতে বিশেষ করে মেধাবীদের সুযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন কি না।”
আদালতের নির্দেশনার কথা তুলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা ব্যবস্থার চালু করার দাবি জানান তিনি।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “মাননীয় সংসদ সদস্যের কথায় মনে হচ্ছে, ইংরেজি মিডিয়ামে পড়লেই মেধাবী, আর বাংলা মিডিয়ামে যারা তারা মেধাবী না। আমরা কিন্তু নিরেট বাংলা মিডিয়ামে পড়ে আসছি। হয়ত মেধাবী না, তবে একেবারে খারাপ যে তাও না। আরেকটু ভালো পড়ার সুযোগ পেলে ভালো রেজাল্ট করতে পারতাম।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা পড়েছেন ঢাকার অগ্রণী স্কুলে। পরে ঢাকার সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ থেকে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ১৯৭৩ সালে বাংলায় স্নাতক করেন। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
শেখ হাসিনা যখন স্কুল-কলেজ জীবন পার করছেন, যাটের দশকের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বাঙালির স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বাবা শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেই সংগ্রামে একটি বড় সময়ই তাকে কারাগারে কাটাতে হয়। বার বার বন্দি হওয়ায় বাবাকে ভাই-বোনদের কাছে না পাওয়ার বেদনার কথা বিভিন্ন সময় বলেছেন তিনি।
শিক্ষাজীবনের সব পর্যায়ে বাংলায় পড়ে আসা শেখ হাসিনা প্রশ্নের জবাবে বলেন, “ইংরেজি মিডিয়ামে যারা পড়ছে তাদের জন্য কেন কোটা রাখতে হবে? কোটা রাখার যৌক্তিকতা দেখি না।”
দেশের মানুষের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিদেশে যদি যায় পড়াশুনা করে আসে। কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। শিল্পায়ন করছি, সব কিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখানে চাকুরির অসুবিধা হচ্ছে, তা নয়। আমরা সরকারে আসার পর প্রায় দুই কোটির মতো চাকরির সুযোগ করে দিয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেকে বিদেশে গিয়ে ফিরেও আসে। এত বিশাল জনসংখ্যা সেখান থেকে কর্মসংস্থানে গেলে এমনিতেই উৎসাহিত করি। পৃথিবী এখন গেøাবাল ভিলেজ। যারা যাচ্ছে, মেধাবীর অভাব হচ্ছে না।”
কর্মসংস্থান নিয়ে তিনি বলেন, “একটা প্রবণতা আছে, যেন তেন পাশ করলেই যেন একটা চাকরি পেয়ে যাবে। অনেক সময় দেখা যায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকতে পারে না বা চাকরি পায় না। আমার একটা কথা হচ্ছে, সবাই চাকরির পেছনে ছুটবে কেন? বরং আমাদের ছেলে-মেয়েরা যারা মেধাবী, তারা নিজেরাই কিছু করবে যাতে আরও ১০ জনকে চাকরি দিতে পারে। সেজন্য স্টার্টআপের জন্য একটা ফান্ড করা হয়েছে। সেখান থেকে টাকা নিয়ে তারা কাজ করে নিজেরা উপার্জনের পথ করতে পারে, আরও ১০ জনকেও কাজ দিতে পারে।”
বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাদের দল যখন ক্ষমতায় ছিল সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোমাবাজি-অস্ত্রের ঝনঝনানি নানা রকম সমস্যা ছিল, সেটা নেই। শিক্ষার পরিবেশ এসেছে। সেশনজট কমিয়ে এনেছি।”