আরও হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় দেশের আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতালে এই রোগ পরীক্ষা ও চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।
রোববার আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ের সময় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা টেস্টিং ফ্যাসিলিটি রাতারাতি বৃদ্ধি করছি। আমরা আগে একটি জায়গা থেকে টেস্ট করতাম। এখন ১১টি জায়গা থেকে টেস্ট করতে সক্ষম হচ্ছি। অলরেডি ৬-৭টা জায়গা থেকে শুরু হয়ে গেছে। আর বাকিগুলোও শুরু হয়ে যাবে।”
দেশের সব বড় হাসপাতালে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কভিড-১৯ পরীক্ষার বন্দোবস্ত থাকলেও গত চার-পাঁচ দিনে এক জন রোগীও সেখানে পরীক্ষা করাতে আসেননি বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
“খালি ফ্যাসিলিটি বাড়ালেই তো হবে না। লোকজনেরও আসতে হবে,” বলেন তিনি।
ইতোমধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, আইপিএইচ ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইইডিসিআরের ফিল্ড ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আইসিডিডিআর,বি, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের ৬৪ জেলা ও ১০০টি উপজেলায় সব ধরনের ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, ইপিআই টেকনিশিয়ান, রেডিওগ্রাফারদের পিসিআর টেস্ট করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
“ল্যাবগুলোকে নিরাপদ রাখার জন্য যারা এটা পরিচালনা করবেন তাদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। তাদের ট্রেনিংয়ের বিষয় রয়েছে। তবে এটা রাতারাতি করে ফেলা সম্ভব নয়। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সব রকমের নিরাপত্তা নিয়ে ল্যাব করা হবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, রংপুর ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পিসিআর মেশিন বসানোর কাজ চলছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দক্ষ কর্মী পাঠানো হয়েছে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে। তারা সেখানে পিসিআর মেশিন বসানোর কার্যক্রম তদারক করছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অন্য বিভাগগুলোতেও পিসিআর টেস্ট অর্থাৎ কভিড-১৯ টেস্ট শুরু হবে।
চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের নমুনা পরীক্ষা ছাড়াও সর্বমোট ৮ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে।
ঢাকার আইপিএইচ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল ইনস্টিটিউট অব ডাইজেস্টিভ ডিজিসেস হাসপাতালগুলোকে কভিড-১৯ রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে।
এছাড়াও ঢাকার বাইরে আরও হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এখন চার-পাঁচটি হাসপাতাল পুরোদমে কাজ করলেও ঢাকার বাইরে আরও ১০-১২টি জায়গা ঠিক করে রাখা হয়েছে, যাদের মৃদু উপসর্গ দেখা দেবে তাদের ওই সব হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
“প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। ধরেন যেসব হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ রয়েছে, তাদের মধ্যে তিনটিকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। আইসিইউ বেডের সঙ্কট যদিও রয়েছে তবুও আমাদের আরও কিছু ভেন্টিলেটর আসছে। সেগুলো কিছু সংখ্যক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে যেন আইসোলেশন কর্নার বাড়ানো যায়।”
জাহিদ মালেক জানান, এখন বাংলাদেশে প্রায় ২৫০ ভেন্টিলেটর আছে। আরও ৩৫০টি ভেন্টিলেটর বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হচ্ছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে তিন লাখ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম হিসেবে ইতোমধ্যে ২০ থেকে ৩০ লাখ পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। এপ্রিলের মধ্যে আরও পাঁচ লাখ পিপিই আসবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগেই জানিয়েছে, উত্তরার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে অতিরিক্ত ১৬টি ভেন্টিলেটর বসানো হয়েছে। শেখ রাসেল ইনস্টিটিউট অব ডাইজেস্টিভ ডিজিজেসে আটটি ভেন্টিলেটর বসানোর কাজ শনিবারের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও আইসিইউ বেড বসানো হচ্ছে।
আকিজ গ্রুপের হাসপাতাল নির্মাণে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানাভাবে এগিয়ে আসছে। কেউ পিপিই দিয়ে, কেউ কিট দিয়ে, কেউ জায়গা দিয়ে সহযোগিতা করছে। আমরা খুবই আনন্দিত। আকিজ গ্রুপের ভবন হলে তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাতে এলাকাবাসীর সুবিধা হত। আমাদের হাসপাতাল রয়েছে। যদি প্রয়োজন না হয়, তবে আমরা সে হাসপাতাল ব্যবহার করব না।”
দেশের কোথাও যদি কোনো চিকিৎসক জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আসা রোগীর চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তবে তিনি ‘অপরাধ করছেন’ বলে মন্তব্য করেন জাহিদ মালেক।
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।