আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনার উপকূল
খুলনায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ ও ৮৩,৫৬০ ঘরবাড়িক্ষতিগ্রস্ত
দ. প্রতিবেদক
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতেউপড়ে গেছে বহু গাছ, বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি। ভারীবর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের ক্ষেত। অনেকজায়গায় পোল ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঝড়ে মহানগরেওঅনেক বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙে গেছে। গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়
অনেক সড়কে। পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নহয়ে পড়ে।শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে খুলনা জেলার ৯টি উপজেলার ৮৩হাজার ৫৬০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায়সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা কয়রা। সেখানে ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে লোকালয়েপানি ঢুকে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাআজিজুল হক জোয়ার্দ্দার জানান, খুলনায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। ৮৩ হাজার ৫৬০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।আম্পানের আঘাতে খুলনার ৯টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়ন এলাকায় কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। কয়রা ও দাকোপে বাঁধ ভেঙে গেছে। খুলনায় ২ লাখ ৭হাজার মানুষ ৮১৪টি সাইক্লোন শেল্টারে বুধবার রাতে আশ্রয় নেন।ঘূর্ণিঝড়ে কোনো মৃত্যু ঘটেনি বলেও জানান তিনি। কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো. জাফর রানা বলেন,ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় উপজেলা কয়রার৪টি ইউনিয়নের ৫২টি গ্রাম সম্পূর্ণ এবং আরও ২টি ইউনিয়নের২৪টি গ্রাম আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২১টি স্থানে বাঁধে ভেঙেগেছে। ৫১ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ১ লাখ ৮২ হাজারমানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।ফুলতলা প্রতিনিধি জানান, বুধবার রাতে ঘুর্ণিঝড় আমফানে ফুলতলাউপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক ঘুটি ও তার ছিড়ে পড়ার খবরপাওয়া গেছে। বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার দুুপুর পর্যন্ত ফুলতলারসর্বত্র এলাকায় বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ ছিল। এতে প্রায় কোটিটাকার উপরে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা যায়, গাড়াখোলা মাধ্যমিকবিদ্যালয়, আব্দুল লতিফ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বাড়িরমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টিনের চাল সম্পূর্ণ উড়ে যায়। গাড়খোলামাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার বিশ্বাস জানান, স্কুলের৬টি ক্লাস কক্ষের টিনের সম্পূর্ণ উড়ে যায়। এতে স্কুলের বেঞ্চ, চেয়ার,টেবিল ও ফ্যানসহ অন্যান্য আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যারআনুমানিক মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। এছাড়া আব্দুল লতিফ ওরাড়ীপাড়া স্কুলের টিনের চাল উড়ে যায়। অপরদিকে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন কাঁচা ঘর বাড়ি এবংগাছপালা উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। কৃষি বিভাগের নিকট থেকেজানা যায়, উপজেলার বিলডাকাতিয়ার সবজি ক্ষেতে এবং মৌসুমী ফলআম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফুলতলার বৈদ্যুতিকবিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ নাছিম রেজা জানান, উপজেলারসদও, শিকিরহাট এলাকায় বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে এবং পোল ভেঙে যায়।সে কারণে বৈদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ ঘটে। তিনি আরও জানান,বৃহস্পতিবারও গ্রাম এলাকায় পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ সম্ভব হবে
না। তবে আমাদের সকল ইউনিটের সদস্যরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েযাচ্ছে। এদিকে ইউএনও পারভীন সুলতানা জানান, ঘুর্ণিঝড় আমফানেফুলতলা বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাঁচা ঘর ও গাছের ব্যাপক ক্ষতিহয়েছে। তবে আগে থেকে সচেতনতার কারণে মানুষ ও গবাদি পশুর কোনক্ষতি হয়নি।