‘আমাদের পেসারদের আরো ভালোভাবে তৈরি করতে হবে’
৫৪১ করার পর জয় তো বহুদুরে এমনকি প্রথম ইনিংসে লিড নেয়াও সম্ভব হলো না। প্রতিপক্ষের ওপর কোন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া কিংবা লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ওপর এতটুকু চাপও সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। এটা কী ব্যর্থতা, সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা নাকি লঙ্কানরা বেশি ভাল?
নানা জনের নানা প্রশ্ন। যিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন, গত ৫ দিন জাতীয় দলের সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ার করেছেন। শ্রীলঙ্কা সফরে টাইগারদের দলনেতা খালেদ মাহমুদ সুজন কোনোভাবেই ব্যর্থতা বলে স্বীকার করতে রাজি নন। তার কথাবার্তায় পরিষ্কার, লঙ্কানরা ঘরের মাঠে সব সময়ই শক্তিশালী দল। প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন।
ব্যাটিং ও বোলিং ডিপার্টমেন্টে কিছু অভিজ্ঞ পারফরমারের সমারোহও আছে। যারা টেস্ট খেলছেন দীর্ঘদিন। কখন কী করতে হবে, তা তাদের ভাল জানা। নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনাও আছে ভাল। সে দলের বিপক্ষে টেস্ট ড্র করাকে সুজন কোন বিশেষ অর্জন বা প্রাপ্তি মানতে না চাইলেও আশার আলো হিসেবেই দেখতে চান।
টাইগারদের টিম লিডারের মূল্যায়ন, ‘শ্রীলঙ্কানরা নিজ দেশে সব সময় শক্তিশালী। কঠিন প্রতিপক্ষ। সব দলের সাথেই ঘরের মাঠে তাদের ভাল খেলার ও লড়াই করার রেকর্ড আছে। ওদের ব্যাটিং সাইডও বেশ স্ট্রং। ওরা ৭-৮ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেছে।’
‘আমাদেরও চান্স ছিল। তৃতীয় দিনের শেষে। যে সুযোগ এসেছিল সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে হয়ত আমরাও লিড নিতে পারতাম। এর সাথে প্রচন্ড গরম। তারপরও সব কিছু মিলিয়ে লিড পেলে ভাল লাগতো। এখান থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখারও আছে।’
বাংলাদেশের পেস বোলিং কী একটু কমজোরি? মানে তিন তিনজন পেসার নিয়েও সে অর্থে কোন কাজই হয়নি। পেসারদের বলে কী ধার কম? এ রকম প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হলে খালেদ মাহমুদ সুজনের জবাব, ‘আমি ঠিক এখনই চরম মন্তব্যে যেতে চাই না। সবার আগে খেয়াল করুন আমাদের যে তিনজন পেসার খেলেছে, তাদের আন্তর্জাতিক আভিজ্ঞতা কতটুকু? তিনজনে মিলে কয়টা টেস্ট খেলেছে? একমাত্র রাহী হয়ত ৮-১০ টা টেস্ট খেলেছে। আর তাসকিন ও এবাদত হাতে গোনা তিন-চারটি ম্যাচ খেলেছে মাত্র।’
‘এটা টেস্টের জন্য খুবই কম। এত কম ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশের বাইরে এসে প্রতিপক্ষ ব্যাটিংয়ের ওপর ছড়ি ঘোরানো, তাদের শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া সহজ না। একদমই নতুন। আসলে একটু অভিজ্ঞতা দরকার। টেস্ট ম্যাচ তো আর এমনি এসে হুট করে ভাল খেলা কঠিন। লোকাল ক্রিকেটও তেমন খেলে না এরা। এমন নয় যে টেস্ট খেলেছে হাতে গোনা, তবে ৪ দিনের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে বেশ- তাও না। তাই ওদের জন্য কাজটা সহজ না।’
সুজন যোগ করেন, ‘এই পেসারদের আমাদের নার্সিং করতে হবে। এদেরকে বেশি বেশি ৪ দিনের ম্যাচ খেলিয়ে টেস্টের জন্য তৈরি করে আরও ভালভাবে গড়ে তোলার দায়িত্বটা আমাদের। রেগুলার লংগার ভার্সান খেলা এবং লং স্পেলে বোলিং করার অভ্যাস খুব দরকার। এটা রাতারাতি হবে না। প্র্যাকটিসে এবং ম্যাচে লম্বা স্পেলে বল করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।’
‘সুরঙ্গা লাকমালকে দেখেন ৩৪ বছর বয়সেও কেমন লং স্পেলে বোলিং করতে পারে। নিজেকে ধরে রেখেছে। ফিটনেসের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এখনো কেমন লম্বা স্পেলে বল করতে পারে। মেইন কথা হলো, এই বয়সেও দেখেন একটা রিদমে বল করে যাচ্ছে। একটা চেইন মেইনটেইন করতে পারছে। পারফেক্ট লাইন ও লেন্থ মেইনটেইন করে যাচ্ছে।’
খালেদ মাহমুদ সুজনের শেষ কথা, ‘এ রকম রিদম করতে হলে খেলতে হবে প্রচুর। ইটস নট অল এবাউট প্র্যাকটিস। প্র্যাকটিসে আপনি করবেন; কিন্তু এই পেস বোলিং ফিটনেস অর্জন করতে হলে প্রচুর ম্যাচ খেলতে হবে। আমার মনে হয় এসব তরুণ পেসারদের চোখে চোখে রেখে টেস্ট ইউনিট গড়ে তুলতে হবে।’
‘টেস্ট প্লেয়ারদের কোনোভাবেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মিস করা চলবে না। আমাদেরও এমনভাবে সব প্রোগ্রাম সিডিউল করা উচিৎ যে, টেস্ট প্লেয়ার যারা তাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতেই হবে।’