আমরা এখনও শঙ্কিত, ভিড় কমাতে না পারলে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকলেও মানুষ ঘরে না থেকে বাইরে ভিড় করায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রোববার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে কোভিড-১৯ অস্থায়ী হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ভিড় কমাতে না পারলে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে।
“আমরা যখন দেখি যে বিভিন্ন যানবাহনে, বিশেষ করে রিকশায় সিএনজিতে জটলা পাকায়; অনেক লোক চলাফেরা করে; দোকানে, শিল্প কারখানার সামনে, ফেরীঘাটে অনেক লোক একত্রিত হয়…।
“এসব দেখে আমরা আতঙ্কিত হই। সংক্রমণ তো বৃদ্ধি পাবে। আপনারা লক্ষ্য করছেন, সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছে। আমরা যদি বাইরে যাওয়া না কমাই তাহলে সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে।”
কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১২ এপ্রিল এই হাসপাতালের কাজ শুরু হয়। সব কাজ শেষে রোববার এর উদ্বোধন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে এখানে দুই হাজার ১৩টি শয্যা রয়েছে। আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে এটি দেশে সবচেয়ে বড়। এখানে ৪০০টি বেডে অক্সিজেন দেওয়ার সুবিধা আছে।
কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় সরকারের পাশে দাঁড়ানোয় বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস ‘হঠাৎ করে’ এসেছে; এর চিকিৎসা না থাকায় উন্নত-অনুন্নত সব দেশই বিপাকে পড়েছে।
“চায়না বৃহৎ শক্তি, তারাও এলোমেলো হয়ে গেছে, এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ইউরোপ-আমেরিকাও হিমশিম খাচ্ছে এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে। সব জায়গায় আঘাত করেছে। আমরাও এর বাইরে নয়। আমরা শুরুতেই রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি।”
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে অন্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশ সরকারও গত ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস-আদালত এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ করে সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেয়।
সেই ‘ছুটির’ মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হলেও সম্প্রতি কিছু ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু করার পাশাপাশি ঈদ সামনে রেখে বিপণি বিতান ও দোকান-পাট খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মসজিদেও আবার বাইরে থেকে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সরকারঘোষিত ছুটির মেয়াদ এখনও শেষ না হলেও রাস্তায় এখন যেভাবে ভিড় বাড়ছে, তাতে সংক্রমণ আরও বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। সরকারের মার্কেট ও কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে সমালোচনাও করছেন।
তবে ভাইরাসের বিস্তারের ঝুঁকি থাকলেও লকডাউন শিথিল না করে যে কেনো উপায় ছিল না, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে বলেন, “জীবন তো কখনও অচল হয়ে থাকতে পারে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শনিবার পর্যন্ত দেশে ২০ হাজার ৯৯৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা গেছে, মৃত্যু হয়েছে ৩১৪ জনের।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ঢাকার ১৪টি হাসপাতালে ৩ হাজার শয্যা আছে। বসুন্ধরার হাসপাতাল এবং সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী আইসোলেশন হাসপাতাল মিলিয়ে সাড়ে সাত হাজার আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ৪০টি ল্যাব প্রস্তুত, আরও ১৫টি ল্যাব তৈরির কাজ চলছে। এগুলো হলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।