January 19, 2025
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের নামের শেষে ‘রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ আজও যুক্ত হয়নি

দ. প্রতিবেদক
শহীদ শেখ আবু নাসেরের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে নামের পরিবর্তনের জন্য ডিও লেটার প্রদান করেন। তারপরও অদৃশ্য কারণে আজও পরিবর্তন হয়নি হাসপাতালের নাম। পদ্মার এপারে প্রায় সাড়ে সাতকোটি মানুষের সেবায় নিয়োজিত একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল। শুধুমাত্র নামের শেষে রিসার্চ ইনস্টিটিউট শব্দটি যোগ না হওয়ায় আজও পূর্ণতা লাভ করতে পারেনি হাসপাতালটি। শহীদ শেখ আবু নাসেরের জ্যেষ্ঠ সস্তান শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে নামের পরিবর্তনের জন্য ডিও লেটার প্রদান করেন। তারপরও অদৃশ্য কারণে আজও পরিবর্তন হয়নি হাসপাতালের নাম।
দক্ষিণাঞ্চলে খুলনা বিভাগের ১০টি জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার গরিব-অসহায় হাজারো মানুষ প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন বিশেষায়িত এই হাসপাতালে। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না চিকিৎসকের সংখ্যা। এতে যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের তেমনি চিকিৎসকরাও হিমশিম খাচ্ছেন রোগীর চাপ সামলাতে। বেশকয়েকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য চিঠি পাঠালেও কোনো ফলাফল আসেনি বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
২৫০টি শয্যা নিয়ে ২০১১ সালে খুলনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের ছোট ভাই এর নামে খুলনায় নির্মাণ করা হয় শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল। সেবার মান উন্নত হওয়ায় এবং রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায়-এ হাসপাতালটিকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবী দীর্ঘ দিনের। এখানে উন্নত চিকিৎসা প্রাপ্তির আশায় আগত রোগীদের মাত্র এক দশমাংশ রোগী ভর্তি করা যায়। বাকীদের ৬ থেকে ৭ মাস সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয়। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও চালু রয়েছে মাত্র ১৭০টি শয্যা। বাকী গুলো প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ রয়েছে।
প্রফেসর ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর গত ৮ এপ্রিল-২১ তারিখ হাসপাতালের বর্তমান নাম পরিবর্তন করে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল এর সঙ্গে রিসার্চ ইনস্টিটিউট অনুমোদনের দাবীতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেন।
তিনি তার আবেদনে (স্মারক নং খু:বি:শে:আ:না: হাস:/২০২১/৬৬৩) উল্লেখ করেন, বিশেষায়িত এ হাসপাতালে সিসিইউ ইউনিটসহ কার্ডিওলজি বিভাগ, নেফ্্েরালজী বিভাগ, নিউরোমেডিসিন, নিউরোসার্জারী, ইউরোলজী, কার্ডিওথেরাসিক এন্ড ভাস্কুলার সার্জারী, প্লাস্টিক রিকনসট্রাকটিভ এন্ড বার্ণ ইউনিট. অর্থপেডিক সার্জারী এবং ওটিসহ আন্ত: ও বহি: বিভাগ চালু আছে। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সহযোগী অধ্যাপকগণ কর্মরত আছেন। রোগীদের আরও উন্নত চিকিৎসা এবং বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্স চালুর জন্য গত ১৬/২/২০১৩ তারিখে সিপিএস নং ১৭৮/২০১৩/৭৫০৫ নং আদেশে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বিসিপিএস অনুমোদন দেয়। ডিপ্লোমা কোর্স অধিভুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় থেকে গত ২১/৩/২০১৫ তারিখ ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্ত হাসপাতালের নাম করণের সাথে ‘ইনস্টিটিউট’ শব্দটি না থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় এর নাম শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট, খুলনা করার সিদ্ধান্ত হয়। শুধুমাত্র নামের পরিবর্তন না হওয়ায় ডিপ্লোমা কোর্সসহ অন্যান্য কোর্স চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৩২টি। পূরণকৃত পদের সংখ্যা আছে মাত্র ১০টি। আর বাকী ২২টি পদই শুণ্য রয়েছে। চিফ কনসালটেন্টের ৫টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৪টি, সিনিয়র কনসালটেন্টের ১২টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৯টি পদ। জুনিয়র কনসালটেন্টের ১৫টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৯টি পদ। এছাড়াও আরপি, আরএস, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন/সমমান (ইএমও/আইএমও) এর ৬২ টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে আরও ৩৮টি পদ। শূন্য রয়েছে সেবা তত্ত্বাবধায়কের একটি পদও।
খুলনা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের নামের শেষে রিসার্চ ইনস্টিটিউট যোগ হওয়া এখন শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে পারলেই সমাধান চলে আসবে। বর্তমানে এ হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা কমিটি গঠন হয়েছে যা পূর্বে ছিলনা। রিসার্চ ইনস্টিটিউট হওয়ার যথেষ্ট স্বক্ষমতা রয়েছে। এখন যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত করানো যেতে পারে।
খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই হাসপাতালের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে বগুড়ায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। পরে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে আবারো শহীদ শেখ আবু নাসেরের নামে এ বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। তিনি বলেন, এ হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা গ্রহণ করছে। হাসপাতালে রয়েছে জনবল সংকট। তারপরও করোনাকালীন সময়ে হাসপাতাল সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই হাসপাতালের নামের সাথে রিসার্চ ইন্সটিটিউট নাম যুক্ত করা হলে চিকিৎসকরা গবেষণা ও বিভিন্ন কোর্স করার সুযোগ পাবেন। সে কারণে চিকিৎসকরা এখানে আসতেও আগ্রহী হবেন। তিনি হাসপাতালের নামের সাথে রিচার্স ইন্সটিটিউট নাম যুক্ত করার দাবীতে সর্বস্তরের খুলনাবাসীকে সোচ্চার হওয়ার দাবী জানান।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি আশরাফ উজ্জ জামান বলেন, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কোটিকোটি মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবী শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল তার পূর্ণতা ফিরে পাক। বিএনপি সরকার আমলে এর উন্নয়ন থমকে গিয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালটির উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন। হাসপাতালটির নামের শেষে রিসার্চ ইনস্টিটিউট শব্দটি যোগ করার জন্য আমাদের দাবী অব্যাহত থাকবে। আমি মনে করি খুলনার উন্নয়নে চলমান আন্দোলনের এটাও একটা অংশ।
এ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শিলু বলেন, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের নামের শেষে শুধুমাত্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট যোগ করার জন্য ওই পরিবারের লোকদের বেশী আগ্রহ থাকা প্রয়োজন। শেখ হেলাল হোসেন এমপি ডিও লেটার দেয়ার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গুরুত্ব না দেয়ার কারণ আমার বোধগম্য নয়। এর জন্য আমরা খুলনাবাসী ভুগতে পারি না।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার বলেন, হাসপাতাল পরিচালনা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে সংকট রয়েছে। অনুমোদিত পদ ৩২টির স্থলে রয়েছে মাত্র ১০টি। বাকী ২২টি পদই শুন্য রয়েছে।
তিনি বলেন, শহীদ শেখ আবু নাসেরের নামে স্থাপিত এ হাসপাতালের পূর্ণতা পেতে এত সময় লাগার কথা নয়। পূর্ণতা লাভের জন্য যে যোগ্যতার প্রয়োজন তা’ এ হাসপাতালে রয়েছে। শুধু মাত্র নামের পরিবর্তন এবং চিকিৎসক সংকট দুর হলে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের এ হাসপাতালটি দেশের মধ্যে একটি মডেল হাসপাতাল হয়ে উঠতে পারে।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *