‘আবাহনী-মোহামেডানের সোনালী অতীতের কথা জানে না বর্তমান খেলোয়াড়রা’
একসময় আবাহনী-মোহামেডান ক্রিকেট ম্যাচ মানেই ছিল সর্বোচ্চ আকর্ষণ। দর্শক, ভক্ত-সমর্থকদের সর্বোচ্চ উৎসাহ-উদ্দীপনা। সেই ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার আগে থেকেই রকিবুল, আলিউল, রফিক, ওমর খালেদ রুমি, দিপু রায় চৌধুরী, আজম, জালাল ইউনুস, সামি, সেলিম, মাইনু, দৌলত, ওয়াহিদের মত বড় তারারা খেলতেন দুই দলে।
ওয়ানডে যুগ শুরুর ঠিক আগে দিয়ে একদম টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার সময় অবধি আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই ছিল লিপু, আকরাম, নান্নু, বুলবুল, শান্টু, নোবেল, মাসুম, লিটন, সুজন, দুর্জয়, পাইলট, রফিক, শান্তদের ব্যাট-বল হাতে লড়াই। বিশ্ব ক্রিকেটের সুপারস্টার ওয়াসিম আকরাম, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, নেইল ফেয়ারব্রাদারের সঙ্গে অজয় জাদেজা, ইজাজ আহমেদ, শহিদ আফ্রিদি, শোয়েব মালিকের মত নামি তারকারাও আকাশী হলুদ আর সাদা-কালোর লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন।
কিন্তু কালের আবর্তে এই ম্যাচের আকর্ষণ হয়েছে ফিঁকে। এখন আর আবাহনী মোহামেডান ম্যাচের সেই আকর্ষণ-উত্তেজনা নেই। দর্শক উৎসাহ কমেছে বহু গুণে। এখন আর আবাহনী-মোহামেডানের নামে মাঠ দর্শকে ঠাসা থাকে না। আর এবার তো করোনার কারণে দর্শক ঢোকাই নিষেধ।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটারদেরও মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচের সেই রমরমা দিনগুলো সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। এখনকার প্রজন্মের মধ্যে সে ম্যাচ নিয়ে আসলে তেমন উৎসাহ-আগ্রহও বোধ করেন না। তাদের কাছে এটা অন্য আট-দশটা ম্যাচের মতই, বাড়তি কিছু না।
খেলোয়াড়ি জীবনে আবাহনী আর মোহামেডান দুই দলে খেলা খালেদ মাহমুদ সুজন জাগো নিউজের সঙ্গে এ লড়াই নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান, বর্তমান ক্রিকেটাররা সেভাবে এই ম্যাচের আগের সেই দিনগুলোর কথা জানেই না, বোঝেও না। এই ম্যাচ দেখতে গ্যালারি ভরা দর্শক মাঠে ছুটে আসত, দর্শকদের গগণবিদারি চিৎকারে স্টেডিয়াম ও তার আশপাশের এলাকার আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠত। তা বিশ্বাস করতেও দ্বিধা ওদের।
বৃহস্পতিবার বিকেএসপিতে শাইনপুকুরের বিপক্ষে বৃষ্টিভেজা ম্যাচে ড্রেসিংরুমে বসে নিজ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ নিয়ে কথা আলাপ করেন আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন।
জাগো নিউজের সঙ্গে তা শেয়ার করে সুজন বলেন, ‘একটা ঘটনা বলি, আমাদের আবাহনীর একটি সাপোর্টার্স ফেসবুক পেইজ আছে আছে, নাম আমিই আবাহনী। সেখানে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। আবাহনীর ম্যাচে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দর্শকে পরিপূর্ণ। আজকে ড্রেসিংরুমে আমি সেটা দেখিয়েছি। ওরা বিশ্বাসই করতে চায় না। লিপু ভাই, আকরাম ভাইয়ের ছবি আছে। তাও যেন ওদের বিশ্বাসই হচ্ছিল না।’
আজ (শুক্রবার) আরেকবার মুখোমুখি হচ্ছে আবাহনী-মোহামেডান। এ বিষয়ে সুজন বললেন, ‘সাকিব আর মুশফিক বাংলাদেশের দুজন বড় স্টার। জানি না, ওদের দুজনের জন্যও এ ম্যাচের বাড়তি আকর্ষণ থাকবে কি না? এখন তো আর ক্রিকেটাররা ক্লাব টেন্টে থাকে না, টেন্টে প্র্যাকটিসও করে না। ক্লাব এর প্রতি মায়া, দরদ আর টানও জন্মায় কম। উত্তেজনা খুব কম। জানেই না, বুঝেই না।’
তবে এটাকে খারাপ চোখে না দেখে অন্যভাবে দেখতে চান সুজন। তার ব্যাখ্যা, এ ম্যাচ নিয়ে কম হইচই বরং ভাল। তাতে চাপ কম থাকে। সুজন বলেছেন, ‘আমিও চাই চাপ কম থাকুক। হয়তো খেলার আগে কেউ না কেউ বলবেন, এই মোহামেডানের সাথে খেলা। তবে আমি চাই চাপমুক্ত হয়ে খেলুক ছেলেরা। মোহামেডানকে হারানোর সামর্থ্য রয়েছে আমাদের।’