আবার কবে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল?
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যস্ততম বছর হওয়ার ছিল এটি। সূচি ছিল ঠাসা। করোনাভাইরাস বদলে দিল বাস্তবতা। ঘরবন্দি ক্রিকেটাররা হাপিত্যেশ করছেন মাঠে ফিরতে। ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাই দিন গুনছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। কবে শেষ হবে অপেক্ষা? কেবল সময়ই দিতে পারে এসব প্রশ্নের উত্তর।
সব ঠিকঠাক থাকলে এই সময়ে পাকিস্তান থেকে একটি করে ওয়ানডে ও টেস্ট খেলে মাত্রই দেশে ফেরার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। সেটি হতো এই বছর দলের তৃতীয় টেস্ট। সামনে অপেক্ষায় থাকত আরও ৭টি টেস্ট। এক বছরে ১০ টেস্ট আগে কখনোই খেলেনি বাংলাদেশ। কিন্তু এর মধ্যেই পিছিয়ে গেছে তিনটি টেস্ট।
করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হয়ে গেছে পাকিস্তান সফর। জুনে বাংলাদেশে এসে দুটি টেস্ট খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। সেই সিরিজও স্থগিত। এই দুই সিরিজের মাঝে মে মাসে যুক্তরাজ্য সফরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও চারটি টি-টোয়েন্টির সিরিজ ছিল বাংলাদেশের। আপাতত হচ্ছে না সেই সফরও। ব্যস্ত সূচির বছরে দলের সামনে এখন অফুরন্ত সময়!
তিন সিরিজ স্থগিত হওয়ার পর আপাতত যে সূচি, তাতে বাংলাদেশ মাঠে নামবে আগামী ২৩ জুলাই। শ্রীলঙ্কা সফরে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার কথা সেদিনই। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে ওই সিরিজ নিয়েও শঙ্কার অবকাশ থাকছে যথেষ্টই।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরি অবশ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছেন, এত আগেই তারা আশা ছাড়ছেন না।
“ওই সিরিজের স্বাগতিক তো শ্রীলঙ্কা, তাদের দিক থেকেই আসবে আলোচনা। এমনিতে ওদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে। তবে এত আগেই মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না। পরিস্থিতি যা দাবি করবে, সেভাবেই সিদ্ধান্ত হবে।”
সময়ের কথা বললে, অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিয়েও সিদ্ধান্ত হয়তো আরও পরে নেওয়ার সুযোগ ছিল। স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নারদের বাংলাদেশে পা রাখার কথা জুনে। সময় আছে দেড় মাসেরও বেশি। তবে অস্ট্রেলিয়া বলেই এখানে বাস্তবতা একটু আলাদা, বললেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী।
“অস্ট্রেলিয়া তো দুনিয়ার আরেক প্রান্তে। তাছাড়া ওরা সবসময়ই নিজেদের ক্রিকেটার বা পারিপার্শ্বিক সবকিছু নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক। এজন্যই দুই বোর্ডের আলোচনায় একটু আগেভাগেই সিরিজ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষ হওয়ার পরপরই বাংলাদেশে আসার কথা নিউ জিল্যান্ড দলের। কিউইদের সঙ্গে বাংলাদেশের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরুর প্রস্তাবিত তারিখ ২০ অগাস্ট। কিন্তু কিউই সংবাদমাধ্যমে টুকটাক যা খবর গত কিছুদিনে বেরিয়েছে, তাতে তারা এখনই ভাবতে শুরু করেছে ওই সফর নিয়ে।
একের পর এক সিরিজ এভাবে স্থগিত হতে থাকলে এই সিরিজগুলোর সবকটি হতে পারবে না নিশ্চিতভাবেই। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় যেরকম ঠাসা সূচি থাকে, স্থগিত হয়ে যাওয়া সিরিজ আবার আদায় করা নিয়ে সংশয় আছে তীব্রভাবেই।
এই বাস্তবতা অবশ্য সব দলেরই। খেলা হচ্ছে না ক্রিকেট বিশ্বের কোথাও। স্থগিত বা বাতিল হচ্ছে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক সিরিজ-টুর্নামেন্টগুলো। ক্রিকেট বোর্ডগুলো অসহায়, কবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে-সেই অপেক্ষায়। করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেমে গেলে সব দেশ মিলেই আবার পূনর্বিন্যাস করতে হবে সূচি, বলছেন বিসিবি প্রধান নির্বাহী।“সমস্যা তো শুধু আমাদের নয়, বৈশ্বিক। আমাদের কারও কিছু করার নেই। একমাত্র সময়ই উত্তর দেবে, কখন স্বাভাবিক হবে সবকিছু। আইসিসি বা অন্যান্য বোর্ডের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। সব ঠিক হয়ে গেলে আইসিসিতে আবার সবাই আলোচনা করে সূচি ঠিক করতে হবে।”
“সবার জন্যই এই ধরনের পরিস্থিতি নতুন। যখন সময় হবে, সবাই আলোচনা করলে সমাধান বেরিয়ে আসবে। আমাদের তো অবশ্যই চেষ্টা থাকবে, স্থগিত হওয়া সব সিরিজ যেন খেলতে পারি।”
অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তার আগে সেপ্টেম্বরে হওয়ার কথা এশিয়া কাপ। নিজাম উদ্দিন চৌধুরি জানালেন, এশিয়া কাপ নিয়ে সিদ্ধান্তও এখনই হচ্ছে না।
“এশিয়া কাপ নিয়ে আপাতত তেমন কোনো আলোচনা নেই। এবার তো স্বাগতিক পাকিস্তান। তাদের যা মনোভাব, হয়তো দুবাইয়েই টুর্নামেন্ট হতে পারে (ভারত যেহেতু পাকিস্তান সফরে রাজী নয়)। তাই এশিয়া কাপ আসলে নির্ভর করবে দুবাইয়ের পরিস্থিতির ওপর।”
বাংলাদেশের পরিস্থিতি যদি উন্নতি হয়, তারপরও আপাতত লম্বা সময় কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই দলের। সেক্ষেত্রে ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকবেন ক্রিকেটাররা, বললেন প্রধান নির্বাহী।
“এটা তো শুধু ক্রিকেট নয়, পুরো দেশের ব্যাপার। সব খেলাই এখন বন্ধ। পরিস্থিতির উন্নতি হলে, যদি খেলা চালুর মতো অবস্থা থাকে, অবশ্যই আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু করব। তবে আপাতত ক্রিকেট নিয়ে ভাবনার চেয়েও বড় ব্যাপার, দেশ যেন দ্রুত এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে পারে।”