November 23, 2024
খেলাধুলা

আবারও কি হবে সাম্বা নাচ?

শেষ ষোলোতে দক্ষিণ কোরিয়াকে গুনে গুনে চার গোল দিলো ব্রাজিল, চারবারই হেলেদুলে নাচলেন নেইমার-ভিনিসিউসরা। তারা যখন আনন্দ করেছে নেচে, তখন নিন্দুকরা এই উদযাপন ভালো চোখে দেখেনি। এমন উদযাপন প্রতিপক্ষকে অসম্মান করতে নয়, এটা বোঝাতে ঘাম ছুটছে প্রধান কোচ তিতে ও খেলোয়াড়দের। কিন্তু এসব সমালোচনা যে তাদের নাচের ক্ষুধা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, তা বলাবাহুল্য। এবার তারা নাচতে চায় ক্রোয়েশিয়ার সামনে।

শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আল রায়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ব্রাজিল মুখোমুখি হচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার, কাতার বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল। ফেভারিট হয়েই গতবারের রানার্সআপদের সামনে দাঁড়াচ্ছে ব্রাজিল। ক্রোটদের হারালে নবমবার সেমিফাইনাল খেলবে তারা, সবশেষ ২০১৪ সালে জার্মানির বিপক্ষে শেষ চার খেলে ৭-১ গোলে হেরেছিল দক্ষিণ আমেরিকানরা।

শুক্রবার বিশ্বকাপে তৃতীয়বারের মতো মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। ২০০৬ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে দেখা হয়েছিল তাদের, দুটি ম্যাচই জিতেছিল ব্রাজিল। প্রথমবার বিশ্বমঞ্চে কাকার গোলে ১-০ তে জয় পায়। আর ব্রাজিল নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ৩-১ গোলে হারায় ক্রোটদের, নেইমার করেন জোড়া গোল।

সব মিলিয়ে চারবারের দেখায় ব্রাজিল কখনও ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারেনি। সবশেষ ২০১৮ সালে নেইমার ও রবার্তো ফিরমিনোর দ্বিতীয়ার্ধের গোলে ২-০ তে প্রীতি ম্যাচ জিতেছিল সেলেকাওরা। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়া কেবল একবারই হার এড়াতে পেরেছিল। ২০০৫ সালে প্রথমবারের দেখায় ড্র করেছিল দুই দল। ওইবার নিকো ক্রানকারের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ক্রোটরা, কিন্তু রিকার্ডিনহোর সমতাসূচক গোলে স্কোর ১-১ হয়।

ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগেও আলোচনায় নেচে গোল উদযাপন। তিতে বলে দিলেন, নাচ চলবেই। যারা সমালোচনা করছেন, তাদের ব্রাজিলের সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতা রয়েছে বললেন প্রধান কোচ, ‘আমি তাদের কাছে ব্যাখ্যা দিবো না যারা ব্রাজিলিয়ান ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানে না। আমি এই হইচই একপাশে সরিয়ে রাখতে চাই। এটা অসম্মানজনক নয়, এমনই (আমরা) এবং এভাবেই হয়, সংস্কৃতি অনুযায়ী। (এটা) স্কুলে বাচ্চাদের শিক্ষায় সহায়তা করবে। আমরা আমাদের মতো করে এসব করে যাবো।’

রিচার্লিসন দক্ষিণ কোরিয়ার জালে বল পাঠিয়ে তিতের কাছে যান এবং নাচে যোগ দেন তিনিও। ৬১ বছর বয়সী কোচ বলেন, ‘আমি মনে করি এটা একটা সম্পর্ক, এই তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে। আমি ৬১ বছর বয়সী এবং আমি ২১-২২ বছরের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করি। তারা আমার নাতী হতে পারতো। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে যদি আমার নাচতে হয়, আমি নাচবো।’

২০১৮ সালের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া যে দুইবার গ্রুপ পর্বের বাধা পেরিয়েছে, প্রত্যেকবারই (১৯৯৮ ও ২০১৮) খেলেছে সেমিফাইনাল। এবার তারা নকআউট নিশ্চিত করেছে বেলজিয়াম ও কানাডাকে পেছনে ফেলে। ক্রোটরা নকআউট মানেই নাটক, ১৯৯৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়ার পর থেকে মেজর টুর্নামেন্টে তাদের শেষ আট নকআউ ম্যাচের সাতটিই গেছে অতিরিক্ত সময়ে। বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার পাঁচটি নকআউট ম্যাচের চারটি গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। জ্লাতকো দালিচের দল তাদের শেষ ১০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে অপরাজিত। ইউরো ২০২০-এর পর থেকে সব প্রতিযোগিতায় ২০ ম্যাচ খেলে মাত্র একটি হার। তবে এই দারুণ ধারাবাহিকতার পরীক্ষা হতে যাচ্ছে উড়ন্ত ব্রাজিলের সামনে।

ক্রোটদের আছে লুকা মদরিচ, ইভান পেরিসিচ, দেজান লোভরেন ও আন্দ্রে ক্রামারিচের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। শেষ ম্যাচে বিশ্বকাপ ইতিহাসে তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে পেনাল্টি শুটআউটে তিনটি গোল ঠেকিয়ে জয়ের নায়ক ডমিনিক লিভাকোভিচকে নিতে হবে নেইমার-ভিনিসিউসদের থামানোর গুরুদায়িত্ব।

এই ম্যাচে চোখ থাকবে নেইমারের ওপর। তিনটি ভিন্ন বিশ্বকাপে গোল করে পেলে ও রোনালদোকে ছোঁয়া পিএসজি ফরোয়ার্ড আর একটি গোল করলে ব্রাজিলের যৌথ সর্বোচ্চ গোলদাতা হবেন। ৭৭ গোল করা পেলের পাশে বসবেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার ভরসা মদরিচের ওপর। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলা এই মিডফিল্ডার মাঝমাঠে দারুণ ছাপ রাখলে ব্রাজিলের সময় কঠিন কাটবে।

ব্রাজিলের দুই তারকা কাসেমিরো ও ভিনিসিউসকে দমিয়ে রাখতে মদরিচ রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। প্রথমজনের সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদে আগে খেলেছেন ও অন্যজনের সঙ্গে স্প্যানিশ ক্লাবে এখনও খেলছেন তিনি। ভিনিসিউসকে নিয়ে মরিদচ বলেন, ‘তাকে থামানোর কাজটা কঠিন কিন্তু আমার সতীর্থদের আমি কিছু উপদেশ দিতে পারি।’

ভিনিসিউস, নেইমার ও রদ্রিগোদের থামাতে নিজেদের সেরাটা দিতে হবে ক্রোয়েশিয়াকে। নয়তো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে হবে তাদের সাম্বা নাচ। আরেকবার ছন্দে ছন্দে নাচের জন্য যে মরিয়া হেক্সা মিশনে থাকা ব্রাজিল।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *