আফগানিস্তান ‘পতনের মুখে’, সতর্ক করল সুইডেন ও পাকিস্তান
আন্তর্জাতিক মহল আশু পদক্ষেপ না নিলে আফগানিস্তানে শিগগিরই বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে বলে সতর্ক করেছেন সুইডেন ও পাকিস্তানের দুই মন্ত্রী।
অগাস্টে পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে কট্টরপন্থি গোষ্ঠী তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই দেশটি টালমাটাল সময় পার করছে; ত্রাণনির্ভর অর্থনীতির দেশটিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পশ্চিমা সহায়তারও আকস্মিক অবসান ঘটেছে।
“দেশটি পতনের দ্বারপ্রান্তে এবং এই পতন আমাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত ধেয়ে আসছে,” দুবাইতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন সুইডিশ উন্নয়নমন্ত্রী পার ওলসন ফ্রিদ।
তার আশঙ্কা, আফগানিস্তানের অর্থনীতির দ্রুত পতন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে।
তবে এরপরও সুইডেন তালেবানের হাত দিয়ে দেশটিতে টাকা পাঠাবে না; আফগান নাগরিক সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাধ্যমেই সেখানে মানবিক সাহায্য কার্যক্রম বাড়াবে, বলেছেন ফ্রিদ।
তালেবান শাসকদের বৈধতা দিতে নারাজ বিভিন্ন দেশ ও বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান অগাস্ট থেকেই আফগানিস্তানে তাদের উন্নয়ন সহযোগিতা স্থগিত রেখে বাড়িয়েছে মানবিক ত্রাণ সাহায্য।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী পরে রয়টার্সকে বলেন, তালেবানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনই আফগানিস্তানের মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোর একমাত্র উপায়।
বিভিন্ন দেশ আফগানিস্তানের যে কয়েক বিলিয়ন ডলার আটকে রেখেছে, তা ছাড়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
“আমরা কি আফগানিস্তানকে বিশৃঙ্খলায় ঠেলে দিতে যাচ্ছি, নাকি দেশটিকে স্থিতিশীল বা তা করার চেষ্টা করতে যাচ্ছি?,” দুবাইতে রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন ফাওয়াদ।
তালেবানদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সেখানে মানবাধিকার সুরক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করা যাবে, বলেছেন তিনি।
পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান; দুই দশক ধরে কাবুলের যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে কট্টরপন্থি গোষ্ঠীটির লড়াইয়েও ইসলামাবাদ সহায়তা করেছে বলে প্রায়ই অভিযোগ উঠেছে।
পাকিস্তান অবশ্য আগে থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ফ্রিদ বলছেন, তালেবান এখন পর্যন্ত প্রমাণ দিতে পারেনি যে তারা তাদের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের নিপীড়নমূলক নীতিগুলো থেকে বেরিয়ে এসেছে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য কাবুলে ফের দূতাবাস খোলার পরিস্থিতি এখনও হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। কাবুলের বদলে কাতারেই আফগানিস্তানকেন্দ্রিক কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়বে বলেও অনুমান তার।
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তালেবানের কথা চালাচালির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে কাতার।
কয়েকদিন আগেই ফ্রিদ দোহায় কাতারে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
পাকিস্তানের মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলছেন, আফগানিস্তানের নতুন শাসকদেরকে স্বীকৃতি এবং নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যসহ তালেবান সদস্যদের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও অন্যান্য বিশ্বশক্তির একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ ঠিক করার এখনই সময়।
এই কাঠামো এবং সরাসরি অর্থনৈতিক সহায়তাই দেশটির অস্থিতিশীলতা দূর করতে পারে।
“(টাইম) বোমার ঘড়ি কিন্তু এরই মধ্যে চলতে শুরু করেছে,” বলেছেন ফাওয়াদ।