আফগানিস্তানে মাতৃসদনে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে নিহত বেড়ে ২৪
২৭ বছর বয়সী জয়নাব অনেক বছরের চেষ্টার পর মা হলেন। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ছোট এক হাসপাতালে একটি ছেলে শিশুর জন্ম দিলেন তিনি। অত্যন্ত খুশি হয়ে সন্তানের নাম দিলেন ‘ওমিদ’, দারি ভাষায় যার অর্থ ‘আশা’।
মঙ্গলবার (১২ মে) সকালে শিশুটির জন্ম হয়। সেদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় হাসপাতাল ছেড়ে বামিয়ান প্রদেশে নিজ বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জয়নব। তখন পুলিশের ছদ্মবেশে তিন বন্দুকধারী হাসপাতালের মাতৃসদনে হামলা করে গুলি চালায়।
গুলিতে মারা যায় জয়নবের শিশু সন্তান। সাত বছর চেষ্টার পর যে শিশুর জন্ম হয়েছিল, মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যেই নির্মমভাবে পৃথিবী ছেড়ে যায় সে।
জয়নবের শাশুড়ি জানান, শিশুটি যেন ঠিকভাবে জন্মায়, সে জন্য ছেলের বৌকে নিয়ে কাবুলের হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি। অথচ এখন তার মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।
এখনো কোনো জঙ্গি সংগঠন এ নৃশংস হামলার দায় স্বীকার করেনি। মঙ্গলবারের এ হামলায় ২ নবজাতক ও ১৬ নারীসহ ২৪ জন নিহত হন। এ ঘটনায় অন্তত ছয় শিশু তাদের মা হারিয়েছে।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা নিয়মিত ঘটনা হলেও এ হতাকাণ্ড স্তব্ধ করে দিয়েছে সবাইকে।
কাবুলের আতাতুর্ক শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসান কামাল বলেন, ‘আমার ২০ বছরের পেশাগত জীবনে এমন ভয়ঙ্কর নৃশংস ঘটনা আমি আর দেখিনি।’
রয়টার্স জানায়, একইদিনে দেশটির পূর্বাঞ্চলে নানগারহার প্রদেশে এক জানাজায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৩২ জন নিহত হয়। একইদিনে মর্মান্তিক দুই জঙ্গি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবানের মধ্যে শান্তিচুক্তি হুমকির মুখে পড়েছে।
তবে তালেবানরা দাবি করেছে, দু’টি হামলার কোনোটিতেই জড়িত নয় তারা।
এ হামলায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আফগানিস্তান শাখাও জড়িত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা নানগারহার হামলার দায় স্বীকার করেছে।
মঙ্গলবার সকালে বন্দুকধারীরা দশত-ই-বারচি হাসপাতালে ঢুকে গ্রেনেড ছোড়ে ও গুলি চালায়। দুপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বন্দুকধারীদের মৃত্যু হয়।
সরকার পরিচালিত ১০০ শয্যার ওই হাসপাতালটির মাতৃসদনটি চালায় আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার।
বর্বর এ হামলার নিন্দা জানিয়ে এক টুইটে আফিগানিস্তানে জাতিসংঘ মিশনের প্রধান ডেবোরাহ লায়ন্স বলেন, ‘কে নবজাতক ও মায়েদের ওপর হামলা চালায়? কে? সবচেয়ে নিষ্পাপদের চেয়েও নিষ্পাপ শিশুদের ওপর কেনো এ আক্রমণ?’
এ হত্যাকাণ্ড আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। হাসপাতালে হামলার সময় বেঁচে যাওয়া চিকিৎসক ও নার্সরা এখনো এ ঘটনার ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি।
হাসপাতালের ধাত্রী মাসুমা কুরবানজাদা, যিনি হামলার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বলেন, ‘গত রাতে আমি একদম ঘুমাতে পারিনি। হামলার ভয়ঙ্কর দৃশ্যগুলো বারবার মনে পড়ছিল।’
তিনি জানান, এরপর থেকেই তাকে হাসপাতালের কাজ ছেড়ে দিতে বলছে তার পরিবার। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ ছাড়তে চান না তিনি।