আফগানিস্তানে দুটি পৃথক হামলায় নবজাতকসহ নিহত ৪০
কাবুলের একটি হাসপাতালে বন্দুকধারীদের হামলা ও নানগারহার প্রদেশে এক পুলিশ কমান্ডারের শেষকৃত্যে আত্মঘাতী বোমা হামলা, আফগানিস্তানে এ দুটি পৃথক হামলার ঘটনায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার পুলিশের ছদ্মবেশে আসা বন্দুকধারীরা রাজধানী কাবুলের একটি হাসপাতালে হামলা চালায়। এতে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার পরিচালিত একটি মাতৃসদনে দুই নবজাতকসহ ১৬ জন নিহত হন।
একই দিন পূর্বাঞ্চলীয় নানগাহার প্রদেশে পৃথক আরেকটি হামলার ঘটনা ঘটে। এখানে এক পুলিশ কমান্ডারের জানাজায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত ও ৬৮ জন আহত হন। এই জানাজায় সরকারি কর্মকর্তারা ও পার্লামেন্টের এক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আফগানিস্তান শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান নানগাহারের হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টেলিজেন্স গোষ্ঠী জানিয়েছে। তবে অনলাইনে জঙ্গিদের তৎপরতর ওপর নজরদারি করা সাইটের প্রতিবেদন তাৎক্ষণিভাবে যাচাই করতে পারেনি বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তাৎক্ষণিভাবে কোনো গোষ্ঠী কাবুলের হামলার দায় স্বীকার করেনি।
আফগানিস্তানের প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান দুটি হামলার কোনোটিতেই তারা জড়িত নেই বলে দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে করা চুক্তি অনুযায়ী শহরগুলোতে হামলা করা বন্ধ রেখেছে বলে জানিয়েছে তারা।
নানগাহারে আইএসের সক্রিয়তা আছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই গোষ্ঠীটি কাবুলে অনেকগুলো বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। সোমবার আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী গোষ্ঠীটি আঞ্চলিক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।
জঙ্গিদের পাশাপাশি আফগানিস্তান এখন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধেও লড়াই করছে। এই পরিস্থিতিতে এসব সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তালেবানের সঙ্গে আফগানিস্তান সরকারের চলমান শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা কয়েকটি ছবিতে ওই মাতৃসদনের ভিতরে দুটি ছোট শিশুকে মরে পরে থাকতে দেখা গেছে। আরেক ছবিতে মেঝেতে পড়ে থাকা নিহত এক নারী তার বাচ্চাকে তখনও শক্ত করে ধরে আছেন, এমনটি দেখা গেছে।
শিশুটি বেঁচে আছে বলে ওই ইউনিটের এক সেবিকা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন। শিশুটিকে আরেকটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নিয়ে রাখা হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, সকালে পুলিশের পোশাক পরা তিন বন্দুকধারী কাবুলের দাস্ত-ই-বার্চি হাসপাতালে প্রবেশ করে হামলা শুরু করে, তারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ও গুলি করে।
বিকালে নিরাপত্তা বাহিনী ওই তিন হামলাকারীকে হত্যা করে।
রমজান আলি নামের স্থানীয় এক বিক্রেতা হামলার শুরুটা দেখেছেন। তিনি বলেন, “হামলাকারীরা হাসপাতালে যাকে পেয়েছে তাকেই কোনো কারণ ছাড়াই গুলি করেছে। এটি একটি সরকারি হাসপাতাল। প্রচুর লোক তাদের স্ত্রী, সন্তানদের চিকিৎসা করাতে এখানে আসে।”
১০০ শয্যার এই হাসপাতালের মাতৃসদনটি পরিচালনা করে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, যারা তাদের ফরাসি নাম মেদসাঁ সঁ ফ্রোঁতিয়ের (এমএসএফ) দিয়েও পরিচিত।
হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে এমএসএফ একটি ছবি টুইট করেছিল। তাতে হাসপাতালের ইর্মাজেন্সি সিজারিয়ান সেকশনে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুকে কোলে নিয়ে মায়ের হাসিমুখ দেখা যায়।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে মা, সেবিকা ও শিশু রয়েছে।
সৈন্যরা হাসপাতালটি থেকে শতাধিক লোককে উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্যে তিন বিদেশি রয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।