আপাতত মাঠ ছাড়লেও ক্লাসে যাবেন না বুয়েট শিক্ষার্থীরা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রশাসনের তৎপরতায় ‘সদিচ্ছা’ দেখে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনের ইতি টানার কথা জানালেও আবরারের খুনিরা বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বুয়েট শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, বুধবার বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক ‘গণশপথে’ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ও সা¤প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন তারা। আর এর মধ্য দিয়েই তাদের মাঠের আন্দোলনের ‘আপাতত’ ইতি টানা হবে।
খুব স্পষ্টভাবে আমরা বলতে চাই, মাঠ পর্যায়ে যে আন্দোলন, তার আপাতত ইতি টানলেও আমরা অবশ্যই সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকব, আমাদের দাবিদাওয়াগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রশাসন নিশ্চিত করছে কি না।
এবং ফাইনালি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা (আবরার হত্যা মামলার) চার্জশিট দাখিলের পর সেটার ভিত্তিতে অপরাধীদের অ্যাকাডেমিকভাবে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো রকম অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবে না।
দুর্গাপূজার ছুটি শেষে বুয়েটে এখন ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন ছুটি চলছে। ১৯ অক্টোবর থেকে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা শুরুর কথা রয়েছে। তার চারদিন আগে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা এল।
বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর নির্যাতনে গত ৬ আগস্ট রাতে তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর আন্দোলনে নেমে ১০ দফা দাবি তোলে বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
দেশে প্রকৌশল শিক্ষার বনেদী এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও সমর্থন প্রকাশ করে। তাদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, আবরার হত্যার আসামিদের সাময়িক বহিষ্কার, হলগুলোতে নির্যাতন বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অধিকাংশ দাবি পূরণের আশ্বাসের পরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের পাঁচটি দাবি তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নের বিজ্ঞপ্তি দিলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আন্দোলন শিথিল করা হয়।
সোমবার ভর্তি পরীক্ষা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বৈঠক করে জানান, তারা ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা এবং উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কথা বলবেন। আন্দোলন চলমান থাকবে কি থাকবে না- সেই বিষয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাবেন মঙ্গলবার।
সে অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এসে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি বলেন, তাদের দশ দফা দাবির মধ্যে তিনটি দাবি ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে। এর মধ্যে আসামিদের অধিকাংশ গ্রেপ্তার হয়েছেন, কাউকে কাউকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, কয়েকজন জবানবন্দিও দিয়েছেন।
সে কারণে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান বুয়েটের ওই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি। তিনি বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎপর হয়েছিলেন বলেই এত দ্রুত অগ্রগতি হয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার ব্যবস্থা এখন স্বাভাবিক গতিতে বিচার কাজ এগিয়ে নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের দশটি দাবির মধ্যে পাঁচটি ছিল বুয়েট প্রশাসনের কাছে। দাবি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বুয়েট প্রশাসনের তৎপরতা তারা দেখেছেন।
আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের ইতোমধ্যে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। নোটিস এসেছে জড়িতদের তদন্তের ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তদন্তের ভিত্তিতে নতুন করে কারও নাম এলে তাদেরকেও আজীবন বহিষ্কার করা হবে।
আবরারের পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করা হবে বলেও বুয়েট কর্তৃপক্ষের নোটিসে জানানো হয়েছে। বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি হলে হলে ‘রাজনৈতিক কক্ষগুলো’ সিলগালা করা হয়েছে। অবৈধ ছাত্রদের হল থেকে উৎখাত করা হয়েছে।
বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে নির্যাতিতদের অভিযোগ জানানোর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির দাবি ছিল শিক্ষার্থীদের। সেটাও বুয়েট কর্তৃপক্ষ পূরণ করেছে। পাশাপাশি সিসিটিভি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রশাসনিক পদ সৃষ্টি করার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি বলেন, বিগত কয়েক দিন ধরে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, আমাদের ভাইয়ের লাশকে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করে আড়ালে অন্তরালে অনেক স্বার্থান্বেষী সংগঠন নিজেদের এজেন্ডাকে প্রমোট করার চেষ্টা করছেন।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এদের সাথে আমাদের কোনা সংশ্লিষ্টতা নাই। এর পাশাপাশি আমরা দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানাই, এই সকল স্বার্থান্বেষী মহল, এদের এজেন্ডা দেখে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।
শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বলেন, রাজপথে আমাদের অবস্থানকে দীর্ঘায়িত করে এ সব অপশক্তিকে এই আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কোনো সুযোগ আমরা দিতে চাই না।
বুয়েট প্রশাসন চলমান তদন্ত প্রক্রিয়া এবং দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে যে সদিচ্ছা ইতোমধ্যে দেখিয়েছে, আমরা সেই সদিচ্ছার প্রতি পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধা রেখে আগামীকাল আমাদের মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনের আপাতত ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তবে আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে যাদের নাম আসবে, তাদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা খুনিদের সাথে সেইম অ্যাকাডেমিক কালচার শেয়ার করতে রাজি নই।