আধো ঘুমে এরশাদ, বিদেশে নেওয়ার ‘পরিস্থিতি নেই’
ঢাকার সম্মিলতি সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
নব্বই বছর বয়সী সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে এখনও অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছেন তার ভাই জি এম কাদের।
শারীরিক এই অবস্থায় আপাতত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরিস্থিতি নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
সকালে সিএমইএচ এরশাদকে দেখে এসে দুপুরে বনানীতে পার্টির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের বলেন, রোববারের অবনতির পর তার ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার আর কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, “এই মুহূর্তে উনাকে কোথাও নেওয়াটা ডাক্তাররা সাজেস্ট করছেন না। অন্য কোথাও শিফট করাটা সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত হবে বলে ডাক্তাররা মনে করেন না। অথবা যে চিকিৎসা চলছে সেটা সন্তোষজনক হচ্ছে বলে উনারা মনে করেন।
“সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ বলছেন এই শারীরিক অবস্থায় উনাকে শিফট করাটা সঠিক হবেনা। তবে এটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমরাও ডাক্তারদের পরামর্শ ছাড়া এমন সিদ্ধান্তে যাব না।”
এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হাসপাতালে গিয়ে এরশাদকে দেখে আসেন। ওষুধের প্রভাবে সেসময় এরশাদ আধো ঘুম-আধো জাগরণে ছিলেন বলে জিএম কাদের।
“ডাক্তাররা বলছেন উনি একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যে আছেন বিভিন্ন ওষুধের প্রভাবে। আধো ঘুম আধো সজাগ অবস্থা যেটাকে বলে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব আসার পর ডাক্তাররা উনাকে সেই কথাই বললেন। তখন উনি চোখ মেলে তাকিয়েছেন। উনার মুখে মাস্ক থাকায় কথা বলতে পারেননি।”
বয়সজনিত নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে গত ২২ জুন থেকে সিএমএইচে চিকিৎসায় আছেন এরশাদ। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতির খবর মেলেনি।
রোববার তার অবস্থার অবনতির কথা জানিয়েছিলেন ভাই কাদের। এরই মধ্যে ফেইসবুকে তার মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের অনুরোধ করেন, কেউ যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো খবরে বিশ্বাস না করেন।
“উনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সারা দেশের মানুষ উৎকণ্ঠায় আছে। তারা প্রতি মুহূর্তেই জানতে চাচ্ছেন, দোয়া করছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু মানুষ অযথা গুজব ছড়িয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়িয়ে দিচ্ছে। একারণে আমরা মনে করি তার বিষয়ে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন।”
তিনি সবার প্রতি অনুরাধ রেখে বলেন, “আমাদের বক্তব্যের বাইরে কোনো বক্তব্য নিজে থেকে প্রচার করবেন না। বিশেষ করে ফেইসবুকের মাধ্যমে অযথা কোনো সংবাদ দেবেন না।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে কাদের বলেন, “আমরা যতটুকু সম্ভব আপনাদেরকে অবহিত করব। সিএমএইচ কর্তৃপক্ষও আইএসপিআরের মাধ্যমে যখন দরকার হবে জানাবে। আর যদি কোনো সংবাদ না পান তাহলে বুঝতে হবে উনার অবস্থা আগের মতোই আছে। যদি কোনো সঙ্কট হয় সঙ্গে সঙ্গে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব।”
এরশাদের সার্বিক শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, “সকাল পর্যন্ত উনার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে, অর্থাৎ অপরিবর্তিত আছে। ডাক্তারদের ভাষায় অপরিবর্তিত থাকা শুভ লক্ষণ। উনারা শঙ্কা করেছিলেন যে অবস্থার অবনতি হতে পারে। তা যেহেতু হয়নি, স্থিতিশীল আছে।
“গতকাল উনার লাংসের ইনফেকশান বেড়েছিল, সেটা কমের দিকে। গতকাল যে শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, আন্ডার প্রেসার অক্সিজেন দিতে হত। এখন দুই ঘণ্টা আন্ডার প্রেসার, দুই ঘণ্টা নরমাল অক্সিজেন দিচ্ছেন। এই ধরনের ট্রেন্ড চালু থাকলে নরমাল অক্সিজেন দেওয়া হবে। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে অক্সিজেন সরিয়ে নেওয়া হবে।”
এরশাদের সংক্রমণ কিডনিতেও ছড়ানোর কথা জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, “উনার কিডনিতে ইনফেকশান একটু বেড়েছে। ডাক্তাররা এখন সেদিকে দৃষ্টি রাখছেন। তবে উনি শঙ্কামুক্ত নন। আমরা আশাবাদী উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
ভাইয়ের সুস্থতার জন্য তিনি দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।