আদালতে না ঘুরে রাজপথে নামলে খালেদা মুক্ত হত : গয়েশ্বর
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপি ভুল পথে হাঁটছে বলে মনে করছেন দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলছেন, আদালতের উপর সরকারের ‘নিয়ন্ত্রণ’ থাকায় আইনি লড়াই চালিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্ত করা যাবে না, এজন্য রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প নেই।
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তার জামিনে মুক্তিতে বাধা হয়ে না দাঁড়াতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে আসছেন বিএনপিরই কয়েকজন নেতা।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর বলেন, আমরা এক বছর ১০ মাস যাবত একটা বির্তকে জড়িয়ে পড়েছিলাম। সেটা খালেদা জিয়ার মুক্তি প্যারোলে, না জামিনে। খালেদা জিয়া কী সাধারণ মানুষ? উনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে আপসহীন নেত্রী হয়েছেন।
সুতরাং গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন নেত্রীর মুক্তির জন্য আমরা আদালতে যাব কেন? একবছর ১০ মাস আদালতের কথা না ভেবে আমরা যদি রাজপথ বেছে নিতাম, তাহলে আমাদের নেত্রীকে আটকে রাখার শক্তি শেখ হাসিনার ছিলে না, এখনও নেই।
আইন পথে খালেদার মুক্তির আশা কেন দেখছেন না, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আদালতে যারা বিচার করেন, তারা চাকরি করেন, তাদের চাকরি চলে যেতে পারে সরকারের রোষানলে। এর প্রমাণ রয়েছে। সঙ্গতকারণে তারা আজকে ন্যায়বিচার করতে পারছেন না।
ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) গত পরশু একটা বলেছেন যে, সকল কিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ আছে, পুলিশের উপর নিয়ন্ত্রণ আছে। তাহলে আদালতও তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
গয়েশ্বর রায় দাবি করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশই বিএনপিতে যুক্ত। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে মুক্তিযোদ্ধা নেই- এই কথা বলা যাবে না, যথেষ্ট পরিমাণে আছে। তবে উনারা সবই হলেন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা। রণাঙ্গনে যুদ্ধ করছেন যারা, তাদের সিংহভাগ বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরতে গিয়ে গয়েশ্বর বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কেউ কেউ হয়ত রাগ করবেন এটা শুনে যে, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে কেন? কারণ শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে আটক ছিলেন। তাও এদেশে নয়, সুদূর পশ্চিম পাকিস্তানে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ভুল বোঝাবুঝি যনে না হয়, সেজন্য পরে দ্বিতীয়বার সংশোধিত আকারে বললেন, আমি মেজর জিয়া, স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছি আমাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে।
শেখ হাসিনার এই কথাটা মানতে কষ্ট হয় কেন? তিনি কেন বললেন না, আমি শেখ হাসিনা বলছি, শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা করছি। স্বাধীনতার পর স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকাটি হওয়া উচিৎ ছিল বলে মনে করেন গয়েশ্বর রায়।
বাংলাদেশে তৎকালীন সময়ে প্রতিটি মানুষই মুক্তিযোদ্ধা। সারা দেশের মানুষই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করছে। তাহলে আমাদের কাজটা (মুক্তিযোদ্ধার তালিকা) করার কী দরকার ছিল? মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছে, রাজাকার-আল বদর-আল শামস এর ছোট তালিকাটা যদি আমরা উপস্থিত করতাম, তাহলে আলাদা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করার প্রয়োজন হত না।
মুক্তিযোদ্ধার তালিকা না হলে এই সনদের অপব্যববহারও হত না বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা। আমরা কোনো চাকরি পামু, সার্টিফিকেট দেখাইয়া এটা পামু, সেটা পামু, সেই আশায় যুদ্ধ করিনি। যুগে যুগে মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে সম্মানিত হবে, এই স্বীকৃতিটাই তাদের চাওয়া। মুক্তিযোদ্ধাদের বেশি যেটা চাওয়া ছিল, সেটা স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা পাই নাই।
মুক্তিযোদ্ধার দুরবস্থার কথা তুলে ধরে গয়েশ্বর বলেন, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে, তাদের সংসার চলে না, তাদের সন্তানদের লেখা-পড়া, আহার জোটে না, তাদের চিকিৎসা জোটে না।
জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি মাহফুজুল কবির, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুলাহ, মিয়া মো. আনোয়ার, ভিপি ইব্রাহিম, জাহাঙ্গীর আলম।