December 21, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

আত্মত্যাগ ছাড়া কোনো কিছু অর্জন সম্ভব না : প্রধানমন্ত্রী

টাইমস রিপোর্ট: কিছু পেতে হলে ত্যাগ করতে হয়। আত্মত্যাগ ছাড়া কোনো কিছু অর্জন সম্ভব না জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ১৯৪৮ সাল থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সে আন্দোলনের শেষ পরিণতি হিসেবে পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ। এর পিছনে রয়েছে লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কমপ্লেক্স মিলনায়তনে এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ-এর ভাষণের ওপর সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, জাতিকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা ছিল ৭ মার্চের ভাষণে। তার নির্দেশনা বাঙালি জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। ট্রাস্টের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে অনেকে অনেক রকম ব্যাখ্যা দেন। তখনকার ছাত্রনেতা এখন যারা জীবিত আছেন, আমি আজকেও একজনের ইন্টারভিউ দেখছিলাম। সেখানে কেউ নানাভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে দিচ্ছেন। আসলে এই ব্যাখ্যাগুলো শুনলে হাসি পায়, যে এরা আসলে কতটা অর্বাচিনের মতো কথা বলে। ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) নাকি নিউক্লিয়াসের সঙ্গে আলোচনা করলেন’ ভাষণে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এখানে মুক্তির সংগ্রাম আগে বলবে না স্বাধীনতার সংগ্রাম আগে বলবে সেটাও নাকি ‘নিউক্লিয়াস’ আলোচনা করেছে। এগুলো সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা কথা। এর কোনও যৌক্তিকতা নেই। ’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই যে একেকজন একেকটা ব্যাখ্যা দেন, আসলে তো, তা নয়। হ্যা, ভাষণে যাওয়ার আগে অনেকেই দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন, অনেকে অনেক পয়েন্ট তৈরি করেছেন, অনেকে বলেছেন এটা বলতে হবে, ওইটা বলতে হবে, এভাবে বলতে হবে, সেভাবে বলতে হবে, এটা না বললে হতাশ হয়ে ফিরে যাবে। নানা ধরনের কথার মধ্যে আমরা জর্জরিত ছিলাম। কাগজে-কাগজে অনেক কাগজ আমাদের বাসায় জমা হয়েছিল। শেষ কথা বলেছিলেন আমার মা। যে কথাটি আমি সবসময় বলি। আমার মা একটা কথাই বলেছিলেন, ‘সারাটা জীবন তুমি সংগ্রাম করেছো, তুমি জানো বাংলাদেশের মানুষ কি চায় এবং তার জন্য কি করতে হবে। তোমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না। কাজেই তোমার মনে যে কথাটা আসবে, তুমি শুধু সেই কথাই বলবে আর কোনও কথা না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভাষণে দেখবেন, এখানে কোনও পয়েন্ট নাই, কোনও কাগজ নেই। কারণ তিনি তো সংগ্রাম করে গেছেন সেই ১৯৪৮ সাল থেকে। তখন থেকেই তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি জানেন, যে মুক্তির পথটি কোথায়, কীভাবে আসবে। তিনি যেসব ব্যবস্থা করে গেছেন, সেটাও তিনি জানেন। সেভাবেই তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যা বাঙালি জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।’
রাজনীতিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিজীবনে আমি কী পেলাম আর কী পেলাম না এ হিসাব করলে চলবে না। রাজনীতিতে এসেছেন দেশের মানুষের সেবা করতে। মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম সেটাই বড় কথা। যা বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন।
তিনি বলেন, ৭৫-এর পরে এ দেশের রাজনীতি ইতিহাস ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হতে ছিল। যুব সমাজ এক সময় অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তারা প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে একজন খল নায়ককে দাঁড় করানো হয়েছিল। তিনি নাকি কোন ড্রামের ওপর উঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোযোগ দিয়ে সেই ভাষণ প্রত্যক্ষ করেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সভাপতি শিল্পী হাসিম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী মাসুদা হোসেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *