আঞ্চলিক সমস্যায় ‘চোরাগোপ্তা’ হামলা : সিইসি
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে আঞ্চলিক সমস্যার কারণে ‘চোরাগোপ্তা’ হামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এ কথা বলেন।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে যে হামলা হয়েছে সেটা আসলে আগে থেকে বোঝা যায়নি। তাই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা এই ঘটনায় তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, পাহাড়ে আগে থেকেই তো বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে সমস্যা চলে আসছিল। সেই সকল সমস্যার বহিঃপ্রকাশ এই হামলা বলে ধারণা করছি। তবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত হলে আসলে সঠিকভাবে বলা যাবে কেন এই হামলা।
সিইসি বলেন, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ফলাফলসহ ফেরার পথে পাহাড়ের উপর থেকে দুস্কৃতিকারীদের অতর্কিত গুলিবর্ষণে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ৭ জন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে হামলা কবলিতদের দ্রুত উদ্ধার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েছে। সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সহায়তায় দুটি হেলিকপ্টারযোগে আহতদর রাতেই চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে কয়েক জনকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সাতজন ঢাকার সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, কমিশন আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। জীবনের মূল্য আর্থিক ক্ষতিপূরণে হয় না। কমিশনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের জন্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আহতদের অবস্থা অনুযায়ী আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। কমিশন সব সময় তাদের পাশে থাকবে। পার্বত্য এলাকায় ভোটের সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। ভোটের সময় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো থাকে না। সারা দেশে উপজেলা ভোটে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা থাকলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়। যাতায়াত ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পার্বত্য এলাকায় ভোটে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন করা হয়। হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে সাড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। কমিশন সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে। ঘটনার দিন বিমান বাহিনী এবং সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। সামরিক ও বিমান বাহিনীর সবাইকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই।
তিনি জানান, ঘটনার সময়ে বিজিবি সশস্ত্র দায়িত্বে ছিল। এগুলো চোরাগোপ্তা হামলা। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক হিসেবের মধ্যে থাকে না। সতর্কতামূলক ব্যবস্থার জন্য সেনাবহিনী মোতায়েন করা হয়। সারা দিন ভোটে কোনো বিশৃঙ্খলা করতে পারেনি। সার্বক্ষণিক টহলের কারণে তারা নির্বাচন ব্যাহত করতে পারেনি। রাতের অন্ধকারে পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে তা নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। আর ঘটনার সময় বিজিবি ছিল, পেছনের গাড়িতে সশস্ত্র পুলিশ ছিল। সেখানে তারা আক্রমণ করে। বিজিবির গাড়ি চলন্ত অবস্থায় ছিল, ফলে একটু দূরে ছিল। পাহাড়ি অঞ্চলের সরু রাস্তায় ঘুরে আসাও সম্ভব নয়। তারপরেও এগুলো অতর্কিত হামলা। পরিকল্পিত এসব হামলা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। ফলে এই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিয়ে কাউন্টার হামলা করা সম্ভব না। পরে সামগ্রিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি ছিল না।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, পাহাড়ি এলাকা একটি ব্যাপক এরিয়া। কোথায় কি হবে তা হিসাব করা যায় না। বিজিবিই নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট ছিল। সব সময়ই নির্বাচনের সময় গণতান্ত্রিক পন্থায় ভোট বর্জন করতেই পারে। কিন্তু বর্জনের পর এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে, তা ধারণা করা যায় না। তবে এই দায় কার সেটি বলা যায় না। ইতিপূর্বে কোন্দলের কারণে অনেক খুনাখুনি হয়েছে। অনেকের জীবন গেছে। একটা সময় দিনে দুপুরে মানুষ হত্যা করা হতো। এটি তেমনই একটি অঞ্চল।