আজ থেকে সারাদেশে সেনা মোতায়েন ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি, পরিবহন সীমিত
প্রশাসনের সমন্বয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যবস্থা নেবে সেনাবাহিনী
সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা
ছুটির সময়ে গণপরিবহন পুরোপুরি বন্ধ না হলেও চলাচল সীমিত হয়ে পড়বে
হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি সেবা ছুটির আওতামুক্ত
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দুর্যোগের মতো পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে নামছে সেনাবাহিনী। আজ মঙ্গলবার থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সেনাবাহিনী প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ জনপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে সেনাবাহিনী প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে তারা জেলা ও বিভাগীয় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে।
সেনাবাহিনী বিশেষ করে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কেউ নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক সময় পালনে ত্রæটি বা অবহেলা করছে কি না, তা পর্যালোচনা করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা এজন্য স্থানীয় আর্মি কমান্ডারের কাছে সেনাবাহিনী কর্তৃক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য আইনানুসারে অনুরোধ জানাবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সংবাদ সম্মেলনের পর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়েছে, ২৪ মার্চ থেকে সামাজিক দূরত্ব, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা পর্যালোচনায় বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় ‘ইন এইড’ টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।
এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকাতে পাঁচ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার, ফলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি থাকবে দেশের সব অফিস-আদালতে। তবে হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরি সেবা সংস্থাগুলো এই ছুটির আওতায় থাকবে না। ছুটির সময় গণপরিবহন বন্ধ না হলেও চলাচল সীমিত হয়ে পড়বে।
বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া কভিড-১৯ রোগের দেশে মহামারী ঠেকাতে সরকারের নানা কার্যক্রম তুলে ধরতে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এসে পাঁচ দিন সাধারণ ছুটির কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, আগামী ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ছুটি, তার পরের দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকছে। এরপর পাঁচ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে আবার ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে মঙ্গল ও বুধবার অফিস-আদালত খোলা থাকলেও এরপর ছুটি দাঁড়াচ্ছে একটানা ১০ দিন। ছুটির আওতায় কারা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই এই সাধারণ ছুটি প্রযোজ্য। তবে হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি সেবা এই ছুটির আওতামুক্ত থাকবে বলে তিনি জানান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দোকানসহ হাট-বাজার এই সময়ে খোলা থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত (খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসা ও মৃতদেহ সৎকার ইত্যাদি) বাড়ির বাইরে না আসার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এই সময়ে বিভিন্ন অফিস-আদালতের প্রয়োজনীয় কাজ অনলাইনে সম্পাদন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে যারা প্রয়োজন মনে করবে, তারা অফিস খোলা রাখবে। ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং ধর্মীয় নেতাদের অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলার ‘বিশেষ অনুরোধ’ জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অসুস্থ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মসজিদে না যেতে বারবার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তা ভঙ্গ করে একজন মিরপুরে মসজিদে যাওয়ার জন্য অন্য ব্যক্তিও আক্রান্ত হয়েছে।
আগামী দুদিন খোলা রাখার বিষয়ে মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, কাল পরশু খোলা থাকবে, কারণ হচ্ছে আজ বন্ধ করে দেওয়া হলে মানুষ মুভ করতে পারবে না। সুতরাং ব্রিদিং টাইম দিতে হবে। কভিড-১৯ রোগে বিশ্বজুড়ে তিন লাখের বেশি আক্রান্ত ও ১৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর পর বাংলাদেশেও ৩৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মারা গেছে তিনজন।
এই পরিস্থিতিতে ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগেই ছুটি দেওয়া হয়েছে। জনসমাগমের মতো কর্মসূচিও বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিও বাতিল করা হয়েছে। জনপ্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে সচিবালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সচিব কায়কাউস দেশে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে সরকারের নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে সবাই সম্মিলিতভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে সঙ্কট মোকাবেলা করা যাবে।
গণপরিবহন সীমিত : গণপরিবহন বন্ধ হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে জানানো হয় যে সরকার তা বন্ধ করছে না, কেননা জরুরি প্রয়োজনে অনেকের তা প্রয়োজন হতে পারে। তবে গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকবে।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যারা জরুরি প্রয়োজনে গণপরিবহন ব্যবহার করবেন, তাদেরকে অবশ্যই করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গাড়িচালক এবং সহকারীদের অবশ্যই মাস্ক ও গøাভস পরাসহ সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গণপরিবহন চালু রাখার বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লকডাউন (সম্পূর্ণ) লকডাউন সায়েন্টিফিক নয়। গণপরিবহন চালু থাকবে, কোনোভাবেই বন্ধ করা হবে না। কেউ যদি শহরে যায় বা গ্রামে যায়, তাহলে চলাচল প্রয়োজন হতে পারে। বাড়িতে থাকার জন্য বলা হয়েছে, গণপরিবহন ব্যবহারে সতর্ক করা হচ্ছে।
বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসছে কি না- জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, কীভাবে রোগীকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করবেন, কোনটা নিউমোনিয়া, কোনটা জেনারেল ফ্লু, সেটা কীভাবে বাছাই করবে, আমাদের যে চিকিৎসা প্রটোকল আছে, তা শেয়ার করা হয়েছে।