আকাশপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু: ক্ষতিপূরণ ৬ গুণ বাড়াতে বিল
আকাশপথে পরিবহনের সময় দুর্ঘটনায় যাত্রী আহত বা নিহত হলে এবং ব্যাগেজ নষ্ট বা হারিয়ে গেলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সংসদে ‘আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিয়ল কনভেনশন) বিল-২০২০’ সংসদে তোলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
পরে বিলটি ১ মাসের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
গত জানুয়ারি মাসে এ বিলে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ওই দিন মন্ত্রিপিরষদ সচিব জানিয়েছিলেন, আগে আকাশপথে পরিবহনের সময় যাত্রীর মৃত্যু বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে ক্ষতিপূরণ ছিল ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। প্রস্তাবিত আইনে এই ক্ষতিপূরণ এক কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কনভেনশনের আলোকে নতুন আইন না হওয়ায় কোনো দুর্ঘটনার জন্য বর্তমানে প্রচলিত আইনে প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ খুবই কম এবং তা আদায়ের পদ্ধতি অস্পষ্ট, সময়সাপেক্ষ ও জটিল।
“এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জন্য আকাশে চলাচলকারী যাত্রীর অধিকার সুরক্ষা ও মালামাল পরিবহন নিশ্চিত করা, যাত্রীর মৃত্যুর কারণে পরিবারের ক্ষতিপূরণ প্রায় ৬ গুণ বৃদ্ধি এবং আদায় পদ্ধতি সহজ করতে আইনটি প্রয়োজন।”
আকাশপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে এবং ব্যাগেজ নষ্ট বা হারানোর ক্ষেত্রে ওয়ারশ কনভেনশন-১৯২৯ এর আলোকে দেশে বর্তমানে প্রচলিত ‘দ্য ক্যারেজ বাই এয়ার অ্যাক্ট-১৯৩৪’, ‘দ্য ক্যারেজ বাই এয়ার (ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন) অ্যাক্ট-১৯৬৬’ এবং ‘দ্য ক্যারেজ বাই এয়ার (সাপ্লিমেন্টারি কনভেনশন) অ্যাক্ট-১৯৬৮ বলবৎ আছে।
এই তিনটি আইনের আলোকে প্রাণহানি, আঘাত ও ব্যাগেজ নষ্ট বা হারানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছিল কম।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ১৯৯৯ সালে মন্ট্রিয়ল কনভেনশন গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ ওই কনভেনশনে ১৯৯৯ সালেই স্বাক্ষর করে।
১৯৯৯ সালে মন্ট্রিয়ল কনভেনশন গ্রহণের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশে তা অনুসমর্থন হয়নি। মন্ট্রিয়ল কনভেনশনটি অনুসমর্থন করে নতুন আইন প্রণয়ন করলে মুত্যু, আঘাত ও মালামাল হারানো বা নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাওয়া সহজ হবে বলে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৮ সালের মার্চে নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৪৯ আরোহীর মৃত্যুর পর এ আলোচনা জোর পায়। এরপর সরকারও আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।
নতুন আইন কার্যকর হলে ফ্লাইট বিলম্বের কারণে পরিবহনকারীর দায় ২০ ডলারের পরিবর্তে পাঁচ হাজার ৭৩৪ ডলার, ব্যাগেজ নষ্ট বা হারানোর জন্য প্রতি কেজিতে ২০ ডলারের পরিবর্তে এক হাজার ৩৮১ ডলার এবং কার্গো বিমানের মালামাল নষ্ট বা হারানোর জন্য প্রতি কেজিতে ২০ ডলারের পরিবর্তে ২৪ ডলার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার সম্পত্তির বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের মধ্যে এ আইনের বিধানের আলোকে ক্ষতিপূরণের অর্থ ভাগ করা যাবে। সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স বা বিমাকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে অথবা আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি এদিন ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল- ২০২০ এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২০ সংসদে উত্থাপন করেন।
পরে বিল দুটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংষদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।