আউয়ালের জামিন: পিরোজপুরের জেলা জজকে বদলি নিয়ে প্রশ্ন হাই কোর্টের
আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম এ আউয়ালের জামিন নিয়ে নাটকীয়তায় পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মান্নানকে প্রত্যাহারের আদেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট।
সাবেক সংসদ সদস্য আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর বিচারককে বদলি করে তার জামিনের আদেশের খবর সংবাদপত্রে দেখে বুধবার আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল দেয়।
যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বিচারক মান্নানকে তার পদ থেকে সরিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
আইন সচিব ও উপসচিবকে (প্রশাসন-১) দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১১ মার্চ বিষয়টি হাই কোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
দুর্নীতির এক মামলায় জামিন আবেদন নিয়ে মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের জজ আদালতে গিয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন।
আউয়াল পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি; তার স্ত্রী লায়লা জেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী।
পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মান্নার জামিনের আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে আউয়ালের ক্ষুব্ধ সমর্থকরা শুরু করেন বিক্ষোভ-ভাংচুর।
এই অবস্থায় জেলা জজ আব্দুল মান্নানকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। এরপর বিকালে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্ব নিয়ে বিচারক নাহিদ নাসরিন আওয়ামী লীগ নেতা আউয়াল দম্পতিকে জামিন দিলে কারাগারে যাওয়া থেকে রক্ষা পান তারা।
এ কে এম এ আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর মঙ্গলবার সকালে তাণ্ডব শুরু করে তার সমর্থকরা।
বুধবার সকালে বিষয়টি হাই কোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী শিশির মনির ও সাইয়েদুল হক সুমন।
তার মধ্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ আইনজীবী শিশির মনিরকে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনার পরামর্শ দেন।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম, মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ও মোহাম্মদ আবুল হোসেন বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে খবরটি আনার পর তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দেন।
কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, “পিরোজপুরের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়াল সাহেবকে জামিন না দেওয়ার প্রেক্ষাপটে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পত্রিকায় এসেছে যে, জামিন না দেওয়ায় আইন মন্ত্রণালয় পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মান্নানকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছে।
“আদালতের কর্মকর্তা হিসেবে আমরা মনে করেছি, এটা আমাদের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য হুমকি। এজন্য এটা আদালতের নজরে এনেছি। আদালত পত্র-পত্রিকাগুলো দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন।”
এদিকে আউয়ালের জামিনের এই ঘটনাকে বিচার বিভাগের উপর চাপ প্রয়োগের নজির হিসেবে তুলে ধরেছেন বিএনপি নেতারা।
হাই কোর্টের রুলের আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, আউয়ালের জামিন আবেদনের শুনানিতে পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মান্নান অত্যন্ত ‘অশালীন ও রূঢ়’ ব্যবহার করায় তাকে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়।
তিনি বলছেন, ‘সিচুয়েশনটাকে প্রশমিত করতেই’ আওয়ামী লীগ নেতা ও তার স্ত্রীকে জামিন দেওয়া হয়েছে এবং এতে আইনের শাসনের কোনো ‘ব্যত্যয়’ হয়নি।
পুরো পরিস্থিতির জন্য জেলা জজ আব্দুল মান্নানকে দায়ী করলেও ঘটনাটির তদন্ত করা হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, “এখানে সরকারি দলের লোক বা অপজিশনের লোক, সেটা কনসিডার করা হয়নি।”
অন্যদিকে আউয়াল দাবি করেছেন, তাকে কারাগারে পাঠানোর ক্ষেত্রে বিচারকের উপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন পিরোজপুরের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, “মঙ্গলবার দুদকের মামলায় আমার জামিন নামঞ্জুর করতে বিচারক মো. আব্দুল মান্নানকে প্রভাবিত করেছেন মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।”
পিরোজপুর-১ আসনে এক সময় সংসদ সদস্য ছিলেন আউয়াল; এবার ওই আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম।
আউয়ালের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংবাদ সম্মেলনে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সর্বৈবভাবে অসত্য ও মিথ্যাচার।”