আইপিও ছাড়তে রবির আবেদন
পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ৩৮৮ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন জমা দিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি।
সোমবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) রবি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে।
বিএসইসির মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে রবির আবেদন করার কথা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিনিয়র অফিসার তানিয়া বেগমও জানিয়েছেন।
কত শেয়ার ছেড়ে কত টাকা তুলবে রবি
রবির আইপিও ইস্যু ম্যানেজারের দায়ত্বে থাকা আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রবি বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে ৩৮৭ কোটি ৭৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা তুলতে চায়।
এজন্য তারা ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ৪০০টি শেয়ার ছাড়বে। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য হবে ১০ টাকা।
এর বাইরে আরও ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার ৯৩৪টি শেয়ার রবি তাদের কর্মীদের কাছে বিক্রি করেছে। সেখান থেকে তারা ১৩৬ কোটি ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৪০ টাকা পেয়েছে।
তাদের মোট শেয়ারের ১০ শতাংশ পুঁজিবাজারে ছাড়বে।
সব মিলিয়ে রবি ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার থেকে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা তুলবে।
এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশের টাকা রবি পেয়ে গেছে। বিএসইসির অনুমোদন পেলে কর্মীদের শেয়ার বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে রবির আইপিও প্রসপেক্টাসে।
টাকা দিয়ে কি করবে রবি
আইপিওর ৫১৫ কোটি ৭৭ লাখ ২৩ হাজার ৫৭৪ টাকা দিয়ে নেটওয়ার্ক পরিধির বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে রবির। আর আট কোটি দুই লাখ নয় হাজার ৭৬৬ টাকা আইপিও বাবদ খরচ হবে।
রবির বর্তমান আর্থিক অবস্থা
২০১৯ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুয়ায়ী কোম্পানিটির সম্পদ মূল্য ১৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। গতবছর তারা মুনাফা করেছে ১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
এ সময়ে তাদের শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ১২ টাকা ৬৪ পয়সা আর শেয়ার প্রতি মুনাফা ৪ পয়সা।
দেশের চার মোবাইল অপারেটরের মধ্যে বর্তমানে কেবল গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। সে কারণে রবিকে শেয়ারবাজারে আনার চেষ্টা চলছিল দীর্ঘদিন ধরে।
২০১৭ সালে ফোরজি লাইসেন্সের নীতিমালায় টেলিকম খাতের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসার শর্ত দেওয়া হলেও সেখানে কোনো সময় বেঁধে না দেওয়ায় রবি তালিকাভুক্তির বাইরে রয়ে যায়।
রবির একটি প্রতিনিধি দল ২০১৫ সালে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছিল।
কিন্তু এয়ারটেলের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রবি মুনাফার ধারা থেকে ছিটকে গেলে তালিকাভুক্তির বিষয়টিও থমকে যায়। সেই জটিলতা সামলে ওঠার পর গতবছর অক্টোম্বরে বিএসইসির সঙ্গে আবারও বৈঠক হয় রবির।
এরপর গত ২১ ফেব্রুয়ারি রবির মূল মালিক কোম্পানি আজিয়াটা মালয়েশিয়া স্টক এক্সচেঞ্জে এক ঘোষণায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দশ টাকা অভিহিত মূল্যের ৫২ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনা সাজানোর কথা জানায়।
আইপিরও জন্য আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি এ বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) মধ্যেই আইপিও এবং নিবন্ধনের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করে।
আজিয়াটার ওই ঘোষণার পরদিন গুলশানে রবির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯ সালে কোম্পানির আর্থিক ফলাফল এবং ২০২০ সালের রবির পরিকল্পনা তুলে ধরতে এসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে দুটি শর্তের কথা জানান প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
শর্ত দুটি হল- মোবাইল কোম্পানি হিসেবে রবি এখন টার্নওভারের ওপর যে ২ শতাংশ হারে কর দেয়, তার বদলে তারা অন্য কোম্পানির মত শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে কর দেবে এবং বিদ্যমান নিয়মে ৪৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্সের বদলে রবি কর দেবে ৩৫ শতাংশ হারে। আর এই সুবিধা দশ বছরের জন্য চাইছে তারা।