December 23, 2024
জাতীয়

আইএস টুপি কোথায় পেয়েছিলেন, জানালেন জঙ্গি রিগ্যান

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

আরেক মামলার শুনানিতে এসে বিচারকের প্রশ্নে জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান বলেছেন, গুলশান হামলার মামলার রায়ের দিন আদালত পাড়ায় ‘অচেনা’ এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি টুপিটি পেয়েছিলেন। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত রিগ্যানকে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়ির জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের মামলায়।

এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানই গত ২৭ নভেম্বর গুলশান হামলার মামলার রায় দিয়েছিলেন; সেদিন এজলাসে জঙ্গি রিগ্যানের মাথায় আইএসের চিহ্ন সম্বলিত টুপি দেখার পর শুরু হয় সমালোচনা, টুপির উৎস সন্ধানে তদন্তও চলছে। ছয় দিন পর আদালতে আসামি রিগ্যানকে পেয়ে বিচারক মজিবুর রহমান জানতে চান, ওই টুপিটি কোথায় পেয়েছিলেন।

কাঠগড়ায় থাকা রিগ্যান তখন বলেন, “ভিড়ের মধ্যে একজন দিয়েছে।”

কে দিয়েছে- বিচারক প্রশ্ন করলে রিগ্যান বলেন, “আমি চিনি না।”

আর কাউকে কি টুপি দিয়েছিল- প্রশ্নে রিগ্যান বলেন, আর কাউকে দেয়নি। প্রিজন ভ্যানে ওঠার পর আরেক আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী ওই টুপিটিই নিয়ে পড়ছিলেন।

টুপিটি নিলেন কেন- জানতে চাইলে রিগ্যান বলেন, “ভালো লাগায় টুপিটি নিয়েছি।”

আইএসর চিহ্ন সম্বলিত ওই টুপি কিভাবে গুলশান হামলার বন্দি আসামিরা পেলেন, তা খুঁজতে কারা কর্তৃপক্ষ ও ডিবি পুলিশ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগার থেকে ওই টুপি নিয়ে যাননি আসামিরা। ডিবি পুলিশের তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন না দিলেও বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, আসামিরা কারাগার থেকেই ওই টুপি নিয়ে এসেছিলেন।

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে রিগ্যান বললেন টুপির উৎসের কথা, যা সেদিন তার পাহারায় থাকা পুলিশের ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই নজিরবিহীন গুলশান হামলার পর জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছিল, তাতে ২৫ জুলাই কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে। সেখানে অভিযানে ৯ জন নিহত হন, আহত অবস্থায় ধরা পড়েন বগুড়ার রিগ্যান।

ওই অভিযানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা, জঙ্গি তৎপরতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়, সেই মামলার বিচার চলছে মজিবুর রহমানের আদালতে। গুলশান হামলার রায়ের দিন টুপি বিতর্কের পর জাহাজবাড়ির মামলাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আদালতে আইনজীবী ও মামলা সংশ্লিষ্ট ছাড়া কাউকেই প্রবেশ ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীদের ঢোকায়ও ছিল কড়াকড়ি।

আইনজীবীদের তল­াশি করে আদালত ভবনে ঢুকতে দেওয়া হলেও অন্যান্য মামলায় বিচারপ্রার্থী অনেকে আটকে যান, যা নিয়ে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী উভয়ের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়। এই মামলার ১০ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার সাতজনকে কারাগার থেকে হেলমেট ও বুলেটপ্র“ফ জ্যাকেট পরিয়ে আনা হয় আদালতে। এদিন শুনানিতে মামলার পলাতক আসামি আজাদুল কবিরাজের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন বিচারক।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, আদালত পলাতক আসামির বিরুদ্ধে ক্রোকি পরোয়ানা জারি করেন। এর মধ্যে পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলে তাকে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১৯ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন। এরপরও পলাতক আসামিকে পাওয়া না গেলে তার অনুপস্থিতিতেই শুরু হবে বিচার।

এই মামলায় রিগ্যান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- সালাহ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসরুল­া হক ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে কুলমেন (৩৩), হাদিসুর রহমান সাগর (৪০)।

এর মধ্যে আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর এবং আব্দুর রউফ প্রধান জামিনে আছেন। তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে রাতভর অভিযানে জঙ্গিদের নির্মূলের পর মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শাহ জালাল আলম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।

২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ১০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন। চলতি বছর ৯ মে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *