আইএসপত্নী শামিমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আশায় বড় ধাক্কা
সিরিয়ার আশ্রয় শিবিরে অবস্থানরত ইসলামিক স্টেট (আইএস) যোদ্ধাপত্নী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামিমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আশা হাই কোর্টে মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছে।
শামিমার মতো ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পরিবার থেকে আসা দুই সন্ত্রাসীকে যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট দেওয়া উচিত হবে না বলে দেশটির উচ্চ আদালতের বিচারকরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
এর ফলে স্বরাষ্ট্রসচিব প্রীতি প্যাটেলের পক্ষে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে এই জিহাদি বধূকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের আইনগত বন্ধ করার পথ প্রশস্ত হলো বলে দ্য ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে আপিলে এই রায় বাতিলও হতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে আসা দম্পতির পরিবারে জন্ম নেওয়া শামিমা ইস্ট লন্ডনে বড় হয়েছিলেন। ১০২৫ সালে ১৫ বছর বয়সে তিনি আইএসের ‘খিলাফতে’ বসবাসের জন্য দুই কিশোরী বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর সিরিয়ার কুর্দি শরণার্থী শিবিরে তার সন্ধান পার এক সাংবাদিক, যিনি শামিমার যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনার খবর দিয়েছিলেন।জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ‘হুমকিস্বরূপ’ বিবেচনায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামিমার নাগরিকত্ব বাতিল করেন। একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রহীন করা অবৈধ হলেও মা-বাবার মাধ্যমে শামিমা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য- এই যুক্তিতে যুক্তরাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়।
গত মাসে ‘স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে’ শুনানিতে শামিমার আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে, বাংলাদেশ সরকার তাকে নাগরিকত্বের অধিকার দিতে অস্বীকার করায় শামিমা এখন রাষ্ট্রহীন।
শুনানিতে তারা নজির হিসেবে তারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই ব্যক্তির বিষয়ে কমিশনের আগের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন, যেক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনায় তাদের নাগরিত্ব বাতিল করেছিল যুক্তরাজ্য সরকার।
আদালতের নথিতে ওই দুই ব্যক্তিকে ই-৩ ও এন-৩ হিসেবে পরিচয় দেওয়া আছে।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বিদেশ সফর করায় ইসলামী জঙ্গি সন্দেহে ই-৩ হিসেবে শনাক্ত ৩৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির নাগরিকত্ব ২০১৭ সালে বাতিল করেছিল যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই সময় থেকেই তিনি বাংলাদেশে বসবাস করে আসছেন।
অন্যদিকে ব্রিটিশ বাবা-মার ঘরে বাংলাদেশে জন্ম হয় এন-৩ হিসেবে শনাক্ত ৩৫ বছর বয়সী অন্য ব্যক্তির, যিনি পরে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সিরিয়ায় গিয়ে আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট জিহাদি গোষ্ঠীতে যোগদানের সন্দেহে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। তিনি এখন তুরস্কে রয়েছে।
দুজনই কমিশনে আপিল করে তাদের নাগরিত্ব ফিরে পান। কিন্তু এখন হাই কোর্ট কমিশনের আদেশ বাতিল করে নাগরিকত্ব বাতিলে সরকারের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে।
উচ্চ আদালত বলেছে, গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের বিপরীতমুখী বক্তব্য এলেও মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে এই দুজনের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
কমিশন বিচারে ভুল করেছে মন্তব্য করে আদালত বলেছে, সন্দেহভাজন এই জঙ্গি যে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছেন, তা তাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে।
বিচারকরা কমিশনকে এই দুজনের মামলা পুনঃপরীক্ষা করতে বলেছে। তাবে তাদের আইনজীবীরা নতুন প্রমাণ হাজির না করতে পারলে কমিশন তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।
এবিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।