অ্যাসাঞ্জ মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ
উইকিলিক্স ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যম, বিচারক এমনকী উর্ধ্বতন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মানহানিকর প্রচার থেকে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
আদালতের শুনানিতে হাজিরা দিতে অপারগ অসুস্থ অ্যাসাঞ্জ
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এক তদন্ত কর্মকর্তা শুক্রবার একথা বলেছেন।
অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করা উচিত না মন্তব্য করে কর্মকর্তা নাইলস মেলজার বলেন, সেখানে অ্যাসাঞ্জ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লোক দেখানো বিচারের শিকার হতে পারেন।
গত ৯ মে কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত লন্ডনের কারাগারে অ্যাসাঞ্জকে দেখতে গিয়েছিলেন জাতিসংঘের নির্যাতন বিষয়ক বিশেষ দূত মেলজার।
সেই সাক্ষাতে অ্যাসাঞ্জকে খুবই নার্ভাস দেখেছেন এবং তিনি প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন বলেই মেলজার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অ্যাসাঞ্জ তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া জটিল মামলা লড়ার অবস্থায় নেই।
যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে নতুন যেসব অপরাধের অভিযোগ এনেছে তা নিয়ে মেলজার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর না করার আহ্বানও জানিয়েছেন বারবার।
বৃহস্পতিবার লন্ডনের আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে অনুষ্ঠিত শুনানিতে অ্যাসাঞ্জ ভিডিও লিংকের মাধ্যমেও হাজিরা দিতে পারেননি। অ্যাসাঞ্জকে জেলের মেডিকেল ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে এবং তার অবস্থা ভাল না বলেই জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
মার্কিন সরকারের বহু গোপন তথ্য ফাঁস করে ২০১০ সালের শেষের দিকে হৈ চৈ ফেলে দেওয়া উইকিলিক্স ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে বিচারের জন্য চায় যুক্তরাষ্ট্র। অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরের বিরুদ্ধে লড়ছেন।
জাতিসংঘ দূত মেলজার জেনেভায় এক সাক্ষাৎকারে রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, “আমরা অ্যাসাঞ্জের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক নির্যাতনে ভোগা একজন মানুষের মত সব লক্ষণই দেখতে পেয়েছি। আমাদের সঙ্গে থাকা মনোচিকিৎসক বলেছেন, তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই জটিল।”
“আমি যেটুকু বুঝতে পেরেছি তা হচ্ছে তিনি (অ্যাসাঞ্জ) এখন হাসপাতালে আছেন এবং বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে সক্ষম নন।”
এক বিবৃতিতে মেলজার বলেন, “বছরের পর বছর ধরে অত্যন্ত নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অমর্যাদাকর আচরণ পাওয়া কিংবা সাজা ভোগ করতে করতে সব মিলিয়ে তার এমন অবস্থা হয়েছে। একে কেবল মানসিক নির্যাতনই বলা যেতে পারে।”
২০১০ সালে লাখ লাখ মার্কিন কূটনৈতিক নথি ও সামরিক গোপন নথি ফাঁস করে উইকিলিকস। ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর গোপন তথ্য ফাঁস করতে চেলসি ম্যানিং অ্যাসাঞ্জকে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
এখন বাড়তি ১৭ টি অভিযোগ নিয়ে মোট ১৮ টি অপরাধের অভিযোগের মুখে আছেন অ্যাসাঞ্জ। দোষী সাব্যস্ত হলে তার কয়েকদশকের জেল হতে পারে।
জামিনের শর্ত ভঙ্গ এবং সাত বছর লন্ডনের ইকুয়েডরের দূতাবাসে অবস্থান করায় এ মাসের শুরুতে অ্যাসাঞ্জকে ৫০ সপ্তাহ কারাদণ্ড দিয়েছে লন্ডনের আদালত।