অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিপাকে, দূতাবাস তাকিয়ে ঢাকার দিকে
কোভিড-১৯ সংক্রমণে সংকটে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ঢাকার পরামর্শের অপেক্ষায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
এপ্রিলের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, করোনাভাইরাস সংকটে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের চলমান অর্থনৈতিক সহায়তা শুধু সেদেশের নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য।
সরকার প্রধানের এ ঘোষণায় অস্ট্রেলিয়ায় থাকা প্রায় ছয় হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন।
এর প্রেক্ষিতে দূতাবাসের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে মোবাইলে এক ক্ষুদে বার্তায় অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ সরকার অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি যেমন পর্যটক, শিক্ষার্থী, সাময়িক বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দুর্দশা সম্পর্কে অবহিত।”
“এক্ষেত্রে আমরা ঢাকার কর্তৃপক্ষের মতামতকে প্রাধান্য দিব। স্থানীয়ভাবে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা এখানকার সরকারি কর্তৃপক্ষের নতুন আইনে ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা বুঝি কেন অস্ট্রেলিয়ান সরকার এই ধরনের কঠিন আইন প্রয়োগ করেছেন। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, তবে আমরা উভয় দেশের সরকারের মতামতের জন্য অপেক্ষা করবো।”
ইতিমধ্যে অনেক সামর্থ্যবান প্রবাসী অসহায়দের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত সুফিউর বলেন, “তবুও আমরা সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে, সামাজিক- সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানদেরকে অনুরোধ করছি তারা যেন এই দুর্দিনে দুর্দশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়ায়। আশা করি শিগগির এ সমস্যার অবসান হবে।”
এদিকে করোনাভাইরাস সংকটে প্রায় সব বাংলাদেশী শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি বা কাজ হারিয়েছেন। অনেকক্ষেত্রে কাজ থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। বিশেষ করে টিউশন ফি, বাসা ভাড়া, খাওয়া ও অন্যান্য খরচ মেটাতে পারছেন না।
২০১৮ সালের জুলাইতে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তে যান পৃথ্বীরাজ মৈত্র। করোনাভাইরাস সংকট শুরু হওয়ার আগে সিডনির লুনা পার্কে সপ্তাহে প্রায় বিশ ঘণ্টা কাজ করতেন। সম্প্রতি তিনি কাজ হারান।
পৃথ্বী বলেন, “আমার প্রতি সেমিস্টারে প্রায় ১৬ হাজার ডলার (অস্ট্রেলিয়ান) টিউশন ফি দিতে হয়। আমার পরিবারের এতো টাকা দেওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই। তাছাড়া বাসা ভাড়া, খাওয়া ও হাত খরচের জন্যও তো আয় দরকার। আমরা যেহেতু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী তাই আমরা অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কোন সহযোগিতাই পাবো না।”
আরেক শিক্ষার্থী মো. আলী ইফতি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ান হারবার ইন্টারন্যাশনাল কলেজে ইনফরমেশন টেকনোলোজিতে অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা করতে আসেন। তার পড়াশোনা চলতি বছরের নভেম্বরে শেষ হলে দুইবছর মেয়াদী ব্যাচেলর করার ইচ্ছা ছিল। করোনাভাইরাস সংকট সে পরিকল্পনায় বড় ধরনের বাগড়া দিয়েছে।
সদ্য বেকার হওয়া এ শিক্ষার্থী বলেন, “জমানো সঞ্চয় দিয়ে বড় জোর আগামী তিন সপ্তাহ বাসা ভাড়া, খাওয়া অন্যান্য খরচ চালাতে পারবো।
“আগামী সেমিস্টারে কোর্স ফি গুনতে হবে প্রায় ২০ হাজার ডলার। এই কোর্স ফি কিভাবে জোগাড় হবে তার উত্তর জানিনা। আগামী তিন সপ্তাহ পরে তিনি কী খাব তাও জানা নেই।”
দেশে কীভাবে ফিরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যদি এই সংকটজনক পরিস্থিতির অল্প সময়ের মধ্যে উত্তরণ না ঘটে তাহলে আমার দেশে যাওয়া অনিশ্চিত। তবে যদি বাংলাদেশ সরকার বা এখানকার বাংলাদেশ হাই কমিশন আমাদের সহায়তা করে তাহলে হয়তো আবার দেশে গিয়ে মা-বাবাকে দেখতে পাবো।”
আরেক বাংলাদেশি মো. আরাফাত কবির মুজিব ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে অস্ট্রেলিয়া আসেন। ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির ইনফরমেশন টেকনোলোজিতে ডিপ্লোমারত আরাফাত বলেন, “দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমার জমানো টাকা শেষ হয়ে যাবে। বাকি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।”
দেশে ফেরার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের আর দেশে ফিরে যাওয়া! যদি মা বাবা কিছু পাঠাতে পারেন কিংবা দেশের সরকার যদি আমাদের কথা ভাবেন তাহলে হয়তো দেশে যাওয়া হবে।”